শরীরে বিভিন্ন প্রকার তিল এবং সমস্যার সমাধান

শরীরে কোথাও না কোথাও তিল নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। জন্মের প্রথম থেকেই শরীরে তিল দেখা দিতে থাকে এবং বয়স বাড়ার সাথে তা সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০-২৫ বছর বয়সে তিলের সংখ্যা কোন ব্যক্তির শরীরে সর্বাধিক হয়ে থাকে এবং তা সংখ্যায় গড়ে ৪০ টির মতাে দাঁড়ায়। মহিলাদের তিলের সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় বেশি থাকে এবং ফর্সা ত্বকে তুলনামূলকভাবে তিলের সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে। শরীরের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তিল হয় না। গালের তিলকে অনেক সময় বিউটি স্পট হিসাবে গণ্য করা হয়। কখনও বিভিন্ন অবস্থানে তিলের উপস্থিতিকে কুসংস্কার হিসাবেও মনে করা হয়, যেমন- প্রচলিত কুসংস্কার হচ্ছে ঘাড়ে তিল থাকলে আততায়ীর হাতে মৃত্যু হতে পারে। আবার কোন মহিলার ঠোটে তিল থাকলে বলা হয় স্বামী তাকে খুব বেশি আদর করবে ইত্যাদি। আর ও অনেক কিছু। তবে এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তিলের প্রকারভেদ সম্পর্কে একটু জানা এবং তিলের কোন বিপজ্জনক দিক আছে কি-না ও এর চিকিৎসা ব্যবস্থা কি সে সম্পর্কে জেনে রাখা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের হিসাবের বাইরে খুব সাধারণ ভাষায় তিলকে দু'রকম বলা যেতে পারে। প্রথমটি হচ্ছে, গাঢ়কালাে রঙের তিল-এগুলাে কখনও কখনও ত্বকের সঙ্গে একই স্তরে (অর্থাৎ কোন উঁচু ভাব নেই), অথবা একটু উঁচু উঁচু ভাব এবং কোন কোনটিতে কালাে মােটা পশম নিয়ে দেখা দিয়ে থাকে। এ জাতীয় তিলকে মােল বলা হয়। এ জাতীয় তিলের একটা বিপজ্জনক দিক আছে, আর তা হচ্ছে-এ জাতীয় তিলে হঠাৎ ক্যান্সার হতে পারে। যা কিনা সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তবে এ জাতীয় কোন তিল ক্যান্সারের দিকে ধাবিত হচ্ছে কি-না, তার কিছু পূর্ব লক্ষণ থাকে 

১। তিলটি হঠাৎ বড় হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ অনেক দিন বা বছর যাবত তিলের আকার প্রায় একই ছিল কিন্তু হঠাৎ আকারে বেড়ে যাচ্ছে। এই বেড়ে যাওয়াটা তিলের চারদিকে সমভাবে নয়, যে কোন একদিকে একটু বেশি। 

২। রঙের পরিবর্তন। অর্থাৎ অনেকদিন যাবত যে রং ছিল তা আর থাকছে না। 

৩। হঠাৎ করে একটু কষ কষ ভাব হওয়া, একটু চটা ওঠা অথবা রক্তক্ষরণ হওয়া অথবা একটু ছুলে যাওয়া। 

৪। তিলের পুরুত্ব বেড়ে যাওয়া, যা আঙ্গুল দিয়ে অনুভব করা যায়। 

৫। ব্যথা অনুভব হওয়া। 

৬। প্রধান তিলের আশপাশে ছােট ছােট নূতন তিল দেখা দেয়া।

এইসব পরিবর্তনগুলাের যে কোন একটি পরিবর্তন দেখা দিলে সাথে সাথেই (দেরি না করে বা হােমিওপ্যাথ খেয়ে সময় নষ্ট না করে) একজন চর্মরােগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এ জাতীয় পরিবর্তন দেখা দিলে তিলটি সার্জারি করে ফেলে দেয়াই নিরাপদ। ফেলে দেয়া তিলের হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল টেস্ট (বায়ােপসি) করে ক্যান্সার হয়েছে কি-না নিশ্চিত হতে হবে। যদি ক্যান্সার নাও হয় তবুও ফেলে দেয়াটা নিরাপদ। কারণ যে কোন সময় এটি থেকে ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে। তখন চিকিৎসা নিতে দেরি করলে ক্যান্সার সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে এবং তা চিকিৎসা ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। আরেক ধরনের তিল হয়, যাকে সাধারণ ভাষায় তিল বললেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ফ্রিকেল। এ জাতীয় তিলকে বাদামি রঙের তিল বলা হয়। ফ্রিকেল কি জাতীয় তিল, তা সাধারণ ভাষায় বােঝাতে হলে বলতে হয়, সাদা চামড়ার লোেকদের মুখে ছিট ছিট তিল হয়। সান বাথে এর সংখ্যা বেড়ে যায়। ফর্সা ত্বকের মহিলারা এ জাতীয় সমস্যায় ভুগে থাকেন বেশি। এ জাতীয় তিল থেকে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে সংখ্যায় বেড়ে গেলে দেখতে বিশ্রী লাগে। অবিবাহিত মেয়েরা সামাজিকভাবে একটু সমস্যায় পড়েন। তবে ভাবনার কিছু নেই। বর্তমানে এর চিকিৎসা ব্যবস্থা বেরিয়েছে। ইলেক্ট্রনিক মেশিনের সাহায্যে এ জাতীয় তিলকে ইলেক্ট্রোফালগারেশন করে খুব সহজেই নির্মূল করা যায়। 
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url