বৃষ লগ্নের ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়
বৃষ লগ্নের জাতক ধীর, একনিষ্ঠ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বেশ সপ্রতিভ, গম্ভীর ও রাশভারি ধরণের লােক। প্রকৃতি ভয়ানক নাছােড়বান্দা ; নিজের মত ও পথ সহজে ছাড়তে তিনি রাজী নন। কারাে পরামর্শ তিনি চান না, কেউ পরামর্শ দিলে (যদি তা নিজের মতের সঙ্গে না মেলে) গ্রাহও করেন না। প্রতিবাদ তাঁর অসহ। তিনি নিজের মতকেই সব চেয়ে বড় এবং ভাল বলে মনে করেন। প্রতিঘাত দেবার ইচ্ছা তার মধ্যে বেশ আছে এবং অনেক সময় তিনি সখ করে বিবাদ করতে চান কেবল প্রতিপক্ষের উপর জয়লাভ করবার আকাঙ্ক্ষায়। তিনি সহজে রাগেন না কিন্তু, তেমনি একবার রেগে উঠলে সে রাগ সহজে পড়ে না; সেই রাগের ঝাঝ এবং প্রতিশােধের বাসনা মনের মধ্যে অনেকদিন ধরে পুষে রাখেন অর্থাৎ তার মেজাজ স্বভাবতঃ ঠাণ্ডা হলেও যখন রেগে ওঠেন তখন আর জ্ঞান থাকে না। তার প্রকৃতিতে একগুয়েমি এবং গোঁড়ামি খুব বেশী মাত্রায় আছে। তার ইচ্ছাশক্তি অত্যন্ত দৃঢ়— তিনি নীরব অথচ অপরিবর্তনীয়। স্থির অধ্যবসায় এবং ধীর বিবেচনার সঙ্গে তিনি নিজের সঙ্কল্পিত কাজে অগ্রসর হন। এই সব গুণের জন্য তিনি শাসনের কাজে অথবা পরিচালনার কাজে বিশেষ যােগ্যতার পরিচয় দিতে পারেন এবং অন্যান্য গ্রহ বিশেষ প্রতিকুল না হলে, বেশ উচ্চপদ এবং যথেষ্ট প্রতিষ্ঠা লাভ করে থাকেন। এই জন্যই চাষবাস কিম্বা বাগানবাগিচার কাজ তার ভাল লাগে এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান অথবা প্রাণিবিজ্ঞানের দিকে তার একটা ঝোঁক থাকা সম্ভব। সবদিকে নজর রেখে ধীরে-সুস্থে কাজ করা তার অভ্যাস ; অতি সামান্য ব্যাপারটিও তার নজর এড়ায় না। প্রত্যেক খুঁটিনাটির উপর তার দৃষ্টি এত বেশী যে, এক এক সময় তা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি বলে মনে হয়। বৃষের জাতক নিজের আরাম-বিরাম এবং সুখ-সুবিধা চান। নিজের অর্থ-সম্পত্তির বিষয়ে তিনি বেশ হিসাবী ও সাবধানী। সব রকম মান-যশ ও প্রতিষ্ঠা লাভের প্রবল আকাঙ্ক্ষা তার মনে আছে। প্রেম সম্বন্ধে তার ঈর্ষা বেশ আছে। কিন্তু একনিষ্ঠা নেই— অর্থাৎ তিনি চান; তাকে যে ভালবাসে সে একনিষ্ঠ থাক, কিন্তু নিজেকে যেন একের মধ্যে বদ্ধ থাকতে না হয়। নিজের এই আত্মপরায়ণতার জন্য তাকে আজীবন বিবাদ-বিসম্বাদের ঝাট পােহাতে হয় এবং আশ্চর্যের বিষয় এই যে, অধিকাংশ স্থলেই তিনি বুঝতে পারেন না যে সে-সব বিবাদ-বিসম্বাদের মূল তিনি নিজেই। বৃষের জাতকের মধ্যে ভােগের ইচ্ছা এবং কর্মপরায়ণতা— এই দুটো ভাবই পাশাপাশি আছে। যখন যে ভাবটা তার মধ্যে প্রকাশ পায় তখনই সেটা অতিরিক্ত মাত্রায় প্রবল হয়ে ওঠে। কাজেই, অতিরিক্ত পরিশ্রম কিম্বা বেশী ব্যসনাসক্তির ফলে কোন রকম গুপ্তব্যাধি দেহে আশ্রয় নিতে পারে। বৃষের জাতক চেষ্টা করলে কতকটা ধনবান হতে পারেন। কিন্তু মামলা-মােকদ্দমায় অথবা কর্মহীন জীবন কাটানাের জন্য, পুত্রকন্যার বিবাহের জন্য, কি বিবাহের পর কোন অবৈধ প্রেমের জন্য, তার কতক অর্থ ও সম্পত্তি নষ্ট হতে পারে। হঠাৎ কিছু কিছু অর্থলাভ হওয়াও তার অসম্ভব নয়। কোন বিশেষ অন্তরঙ্গ বন্ধুর সাহায্যে কি কোন আত্মীয়ের নিকট থেকে অথবা কোন প্রেমের ব্যাপার থেকে, তার অর্থ বা সম্পত্তি লাভ হতে পারে।
বৃষের জাতকের পিতামাতা প্রায়ই সদ্বংশ-সন্তুত হন— বিশেষ করে তার পিতার নিজের সমাজের মধ্যে যথেষ্ট সম্মান ও প্রতিষ্ঠা থাকে। ভাই-বােন অথবা জাতির জন্য তাকে কষ্ট পেতে হয়, ভাই-বোনের শােক পাওয়াও অসম্ভব নয় অথবা, এ-ও হতে পারে যে, ভাই-বােনের বা জাতির জন্য কি তাদের দিক থেকে কোন রকম অপমান অথবা মানহানিকর ব্যাপার উপস্থিত হতে পারে। ফাটকার (speculation) কাজে অথবা সন্তানাদির দ্বারা জাতকের লাভ হওয়া সম্ভব; কিন্তু, বিবাদ-বিসম্বাদ অথবা মামলা-মােকদ্দমায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। বৃষের জাতকের সন্তান সম্বন্ধে একটা বিশেষ চিন্তা থাকে। প্রথম সন্তান পুত্র হলে প্রায়ই দীর্ঘজীবী হয় না; কন্যা হলে, তার বিবাহের জ চিন্তা বা বৈধব্যের জন্য দুঃখভােগ করতে হয় এবং অন্য সন্তানের মধ্যে দু’চারটি নষ্ট হয়ে যায়। তাহলেও, অন্যান্য পুত্রের তরফ থেকে তার বেশ আনন্দ এবং যথেষ্ট আর্থিক লাভও হতে পারে— পুত্রের বেশ কৃতী হওয়া সম্ভব এবং তারা বিজ্ঞান, শিল্প ও কলাবিদ্যায় কমবেশী পারদর্শী হয়ে থাকে। পুত্রদের পরস্পরের মধ্যে সময়ে সময়ে মতান্তর অথবা অবনিবনাও হতে পারে এবং তার জন্য জাতককে কিছু ঝঞ্জাটও পপাহাতে হয়। পুত্রকন্যার বিবাহ ব্যাপারে নানা রকম গােলযােগ বা অশান্তি উৎপন্ন হতে পারে। সাংসারিক হিসাবে, মােটের উপর, বৃষের জাতকের জীবন বেশ স্বচ্ছন্দে কেটে যায়; কিন্তু তার অস্থান-প্রযুক্ত কলহ-প্রবণতা কি অপরের কাজে বাধা দেওয়ার অযথা চেষ্টার জন্য, অনেক সময় তাকে কষ্ট পেতে হয়; তা ছাড়া, তার অপরিবর্তনীয় মত এবং একগুয়েমির জন্যও তাকে মাঝে মাঝে ভুগতে হয়। তার বিবাহিত জীবন খুব সুখের হয় না হয় স্ত্রী বাঁচে না না-হয় স্ত্রীর সঙ্গে বনে না।
বৃষের জাতকের স্বাস্থ্য মজবুত হলেও অপরিমিতাচার অথবা অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য তার স্বাস্থ্যহানি হতে পারে। লিভার, প্লীহা প্রভৃতির বৈকল্য, মূত্রাশয় (kidney) , মূত্রাধার (bladder) অথবা জননেন্দ্রিয়ের রােগ সম্বন্ধে তার সতর্ক থাকা উচিত। পাথুরী (gravels), বহুমূত্র ইত্যাদি রােগের প্রবণতা তার মধ্যে আছে এবং গলার কোন রােগ যেমন Tonslitis, Pharyngitis প্রভৃতি, কি চোখের বা কানের কোন রকম ব্যাধিও হতে পারে। হৃদরােগ এবং বাত সম্বন্ধেও জাতকের সতর্ক থাকা উচিত। জাতকের পদমর্যাদা কি ধনসম্পত্তি প্রথম বয়সে তত নিশ্চিত থাকে না; প্রৌঢ় বয়সে অঙ্গের সংশ্রবে কিম্বা শিল্প, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের দ্বারা অথবা কোন উচ্চ প্রােফেশনে, কিম্বা বিদ্যালীবির বৃত্তি (যেমন শিক্ষকতা, গ্রন্থকর্তৃত্ব প্রভৃতি) কিম্বা উচ্চ রাজকার্যের দ্বারা জাতক বিশেষ প্রতিষ্ঠালাভ করতে পারেন। বৃষের জাতকের অনেক বন্ধু হয় এবং তার দু’চার জন বিশেষ উচ্চপদস্থ বন্ধুও থাকে। কোন গােপনীয় ব্যাপারে তিনি অনেক বন্ধুলাভ করে থাকেন এবং কোন বন্ধুর দ্বারা গােপনীয় কোন ব্যাপারে তিনি সাহায্য পেতে পারেন। বন্ধুর কাছ থেকে কিছু অর্থ বা সম্পত্তি পাওয়াও অসম্ভব নয়। বন্ধুর কোন গােপনীয় কাজ করেও তার অর্থাগম বা লাভ হতে পারে। কিন্তু, তেমনি আবার কোন কোন বন্ধু তাকে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্তও করতে পারে। বন্ধুর অথবা জামাতার জন্য তার মিথ্যা অপবাদ হতে পারে এবং বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ গুপ্তশত্রু হয়ে উঠে জাতকের মিথ্যা অখ্যাতির সৃষ্টি করতে অথবা অন্য কোন রকমে অপদস্থ করবার চেষ্টা করতে পারে। জাতকের প্রকাশ্য শত্রুও অনেক থাকা সম্ভব, যারা গুরুতর অপবাদ দিয়ে জাতককে অপদস্থ, ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদাপন্ন করবার চেষ্টা করতে পারে। এই শত্রুদের মধ্যে অনেকেই বেশ ক্ষমতাশালী লােক হওয়া সম্ভব এবং তাদের জন্য জাতকের জীবনে অনেক অশান্তি আসা বিচিত্র নয়— এমন কি ' এই রকম কোন প্রকাশ্য শত্রুর জন্য জাতকের কর্মবৈকল্য বা কর্ম্মহানি এবং সম্মান ও প্রতিষ্ঠা হানি হতে পারে। কিন্তু জাতক শেষে তার অদম্য পুরুষকারের দ্বারা নিজের হৃত সম্মান ও প্রতিষ্ঠার পুনরুদ্ধার করে থাকেন। জাতকের স্ত্রী যে কোন কারণেই হােক, নির্জনবাসে জীবন কাটাতে কি ব্রহ্মচারিণীর জীবন যাপন করতে উদ্যত হতে পারেন। বৃষের জাতকের দীর্ঘজীবী হবার সম্ভাবনা খুব বেশী, যদিও নানা রকম বিপদ আপদ তাকে অতিক্রম করতে হয়। জীবনের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের দিকে তার বেশ লক্ষ্য আছে এবং তিনি জানেন কি করে সমস্ত দেহমন দিয়েউপভােগ করতে হয়। আহারাদির খুঁটিনাটির দিকে তিনি বেশ নজর রেখে থাকেন এবং বিশেষ বিশেষ খাদ্যের উপকারিতা-অপকারিতা সম্বন্ধে বেশ জ্ঞান আছে। খাদ্যসম্বন্ধে তার কতকগুলি বিশেষ বাছ-বিচার থাকা সম্ভব। সাংসারিক জীবন স্বচ্ছন্দ হ'লেও, বৃষের জাতকের মৃত্যু হওয়া সম্ভব তীর্থে, বিদেশে, সমুদ্রে অথবা জলের উপর। অতিরিক্ত পরিশ্রম, অনিয়ম, অত্যাচার, অতিভােজন বা উপবাস, ইন্দ্রিয়-সংযমের অভাব, বা খুব বেশী কঠোরতা, জাতকের জীবনীশক্তি হ্রাস করতে পারে। স্বাস্থ্যের জন্য জাতকের পর্যাপ্তআহার এবং উপযুক্ত বিশ্রামের প্রয়ােজন।
যে সকল খ্যাতনামা ব্যক্তি বৃষ লগ্নে জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম: শ্রীকৃষ্ণ, মহারাণী ভিক্টোরিয়া, স্বর্গীয় স্যার আশুতােষ মুখােপাধ্যায়, শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্রনাথ মল্লিক।
প্রিয় পাঠক, শব্দের বানানে ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন, আর— এই বিষয় আরো পোস্ট পড়তে সূচিপত্র দেখুন। — গণক্কার।