কর্কট লগ্নের ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়

যার কর্কট লগ্নে জন্ম, সেই ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়?
কর্কট লগ্ন

কর্কটের জাতকের প্রকৃতি সমুদ্রের মতনই পরিবর্তনশীল। তার ভাব বােঝা কঠিন ব্যাপার— এই মনে হয় তিনি সন্ধিগ্ধচেতা, সাবধানী ও হিসাবী লােক; আবার পরক্ষণেই দেখা যায় তিনি বে-পয়ােয়া, বে হিসাবী, আমােদ-আহলাদ, রােমান্স, নিয়ে মাতােয়ারা হয়ে উঠেছেন। একসময় মনে হয় সদানন্দ ও শান্ত-প্রকৃতি, আর-একসময় খিটখিটে, চপল ও অধীর— একময় তিনি বে-মিশুক, নির্জনতা-প্রিয়; আবার অন্যসময় সামাজিক, সদালাপী। মােট কথা, কর্কটের জাতক এত পরিবর্তন-প্রিয়, নূতনত্বের দিকে তার এত ঝোক, যে তাকে বুঝে উঠা শক্ত। কর্কটের জাতক কল্পনা প্রবণ ও অদ্ভুত-খেয়ালী এবং তিনি অদ্ভুত দৃশ্য ও ঘটনা খুব ভালবাসেন। ‘ যখন যার কাছে তখন তার মতন ’ এটা তার একটা প্রধান লক্ষণ, অন্য লােকের ভাবে চট করে নিজেকে অনুপ্রাণিত করবার শক্তি তার অসাধারণ। এই জন্য যে-কোন হুজুগে তিনি সহজে মেতে উঠতে পারেন এবং অনেক সময় তার মধ্যেও নবেলিয়ানা (নাটুকেপণা) ভাব দেখা যায়। অন্যলােকের কথা শুনে বা অন্যলােকের বই পড়ে তা থেকে একটা ভাব নিয়ে নিজেকে মস্ত বড় স্বার্থত্যাগী বীর বা শহীদ ব'লে মনে করা এবং তার জন্য গর্ব অনুভব করা তার পক্ষে মােটেই অসম্ভব নয়। তার নাটকীয় বােধও খুব প্রবল এবং এ বিষয়ে যদিও মাঝে মাঝে তিনি মৌলিকতার পরিচয় দিতে পারেন তাহলেও, অধিকাংশ স্থলেই পরের অনুকরণ করে থাকেন। 

অনেক সময় কর্কট লগ্নের জাতক পরের ভাব নিয়ে নিজের বলে পরিচয় দিতে পারেন। পুরানাে জিনিষকে একটু বদলে সদলে ঠিক করে নিতে কর্কটের জাতক খুব পটু। নূতনের দিকে আকর্ষণ তার অত্যন্ত বেশী; প্রত্যেকবার নূতনের পিছনে ছােটবার পর যদিও তার ভুল ভাঙে তাহলেও তিনি ফের নূতন দৃশ্য, নূতন বন্ধন, খুঁজতে যান। কেন না, সঙ্গ ও মেহের আদান-প্রদান (তা সে সাময়িক হলেও ক্ষতি নেই) তার একান্ত দরকার। কর্কটের প্রকৃতি বহুমুখীন। কাজেই, জাতকের নানাবিষয়ে দক্ষতা ও পারদর্শিতা থাকে এবং যে কোন সমাজে বা যে কোন অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নেবার শক্তি তার অসাধারণ। সাধারণের কাজে সংশ্লিষ্ট হবার এবং সাধারণের সম্মুখে আসবার প্রবৃত্তি তার মধ্যে প্রবল। সাধারণ সম্পৰ্কীয় কাজে তিনি যথেষ্ট পটুত্বেরও পরিচয় দিতে পারেন। তা ছাড়া, দরদপ্তর করা ও কোন বিষয়ের রফা করা সম্বন্ধেও তার বেশ দক্ষতা আছে। কর্কটের জাতক উচচপদ, মানসম্ভ্রম ও যশের কাঙাল এবং তিনি কিছু নামও পান, কিন্তু সে নামকে সব সময়ে সুনাম বলা চলে না। কর্কটের জাতক অবস্থা বুঝে, সাহসীও হন ভীও হন। সাধারণতঃ, শারীরিক বিপদ আপদ সম্বন্ধে তার মনে একটা ভয় থাকে, কিন্তু মানসিক বা আধ্যাত্মিক ব্যাপারে অনেক সময় যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। কর্কটের জাতকের ভাগ্যও তার প্রকৃতির মতই পরিবর্তনশীল। “ চক্রবৎ পরিবর্তন্তে মুখানি চ দুখানি চ ” এ কথা কর্কটের পক্ষে যেমন খাটে এমন আর কারও নয়। তাকে অনেকএ উত্থান-পতন, অনেক উন্নতি অবনতির মধ্য দিয়ে চলতে হয়।

কর্কট লগ্নের অর্থ উপার্জন খুব সহজে হয় না এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি অনেক সময় ফাটকার (Speculation) দ্বারা, ‘ সন্তানের জন্য, অথবা সন্তান-সংক্রান্ত কোন ব্যাপারের বারা, নিজের বিলাসব্যসনের জন্য অথবা রাজা, বা সমাজের বিরুদ্ধাচরণের জন্য নষ্ট হতে পারে। উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পেলেও, তা পেতে অনেক বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করতে হয় কিম্বা তা অনেক বিলম্বে আসে। যদিও এই সব কারণে জাতককে উদ্বেগ ও অশাস্তি ভােগ করতে হয় তাহলেও, তাঁর জীবনের শেষভাগ স্বচ্ছল ও সফলতা মণ্ডিত হওয়া সম্ভব। ভ্রাতা ভগ্নী ও আত্মীয় স্বজন নিয়ে জাতককে অনেক কাট ও অশান্তি লােগ করতে হয়— ভ্রাতা-ভগ্নীর শােক পাওয়া খুব সম্ভব। আত্মীয়-স্বজনের দিক থেকে অনেক সময় বিশেষ শক্ত হয় এবং সেই শত্রুতার দরুণ নানারকম ঝঞ্চাট, অশান্তি, অপবাদ, বা ক্ষতি হতে পারে। সন্তানের দিক থেকেও তার কিছু দুঃখ পাওয়া সম্ভব এবং পুত্রকন্যার জন্য জীবনে অনেক অশান্তি আসে। কিন্তু তার জ্যেষ্ঠ পুত্র অনেক সময় সামরিক কি রাসায়নিক কোন কাৰ্যে অথবা শাসনবিভাগের কি জমীদারি পরিচালনার কোন কার্যে কৃতকাৰ্য্য হন এবং সে অন্য খ্যাতিও পেয়ে থাকেন। অনেক সময়, শেষ বয়সে তার পুত্রকন্যার বিশেষ উন্নতি হয়ে থাকে এবং তা-থেকে সাংসারিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সচ্ছলতা আসে। কর্কটের গুপ্ত এবং প্রকাশ্য নানারকম বিপদ আপদ হয়; কিন্তু একটা অদৃশ্য দৈবশক্তি যেন তাকে সব বিপদ থেকে উদ্ধার করে। বিবাহ বিষয়ে তার বড় বেশী সুখ হয় না; তার বিবাহিত জীবন প্রায়ই সুখহীন হয়।

কর্কট লগ্নের ব্যক্তির স্ত্রী অত্যন্ত গম্ভীর ও কঠোর অসামাজিক অথবা নিষ্ঠুর হতে পারেন অথবা স্ত্রীর জন্য নানারকম প্রকাশ্য বিপদ হতে পারে। তার স্ত্রীর প্রকৃতি তার নিজের প্রকৃতির সম্পূর্ণ বিপরীত হতে পারে। তিনি নিজে কল্পনাপ্রিয় কিন্তু তার স্ত্রী বাস্তবতাপ্রিয় হওয়ার খুব সম্ভাবনা। বিবাহে যদিই কোন সম্পত্তিলাভ (উত্তরাধিকার সূত্রে) হয়, তাহলে সে সম্পত্তি পাবার জন্য অনেক কাঠখড় পােড়াতে হয়, অনেক মামলা-মােকদ্দমা করতে হয়। কর্কটের জাতককে অনেক জায়গায় ঘুরতে হয় এবং অনেক দূরদেশে যেতে হয় এবং ভ্রমণের দ্বারা তার কৃতকাৰ্যতা ও খ্যাতি লাভ অসম্ভব নয়। কর্মোপলক্ষে তার অনেক সময় ভ্রমণ হওয়া সম্ভব এবং অনেক সময় কোন দুর্গম দেশে, ধর্মোপলক্ষে বাস করতে হয়। উদ্যম ও কর্মশক্তির জন্য জাতক খ্যাতিলাভ করতে পারেন কিন্তু তার খ্যাতি অনেক সময় প্রবল শত্রুর সৃষ্টি করে। পারিবারিক ব্যাপারে অসুখের খুব কারণ না-থাকলেও বিশেষ সুখ হয় না এবং স্ত্রীলােকের শত্রুতার জন্য অনেক সময় পারিবারিক সুখ একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। শেষ বয়সে পরিবার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে। বিদেশে তার নানারকম বিপদের আশঙ্কা হতে পারে, যেমন বন্ধন, গুপ্তশত্রুর ভয়, গুপ্ত আক্রমণের ভয় ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবিক বিশেষ কোন গুরুতর বিপদ ঘটে না। জাতককে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে হয় দস্তুর মত যুদ্ধ করে কিন্তু তার প্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে অনেক মতভেদ থাকে এবং তার নানারকম অখ্যাতি হওয়া অসম্ভব নয়। 

কর্কট লগ্নের জাতক নিজের চেষ্টায় এবং সৎসাহসের দ্বারা কৃতকাৰ্যতা লাভ করে থাকেন; কিন্তু ছত্রিশ বছর বয়সের আগে বড় একটা কিছু হয় না। তারপর, তিনি কতকটা প্রতিষ্ঠালাভ করেন। বন্ধুদের দ্বারা, বিশেষ করে কোন মহিলা-বন্ধুর দ্বারা, আর্থিক হিসাবে জাতক যথেষ্ট উপকৃত হন এবং অন্য বিষয়েও সাহায্য পান। কি একজন মহিলা বন্ধুর সংশ্রবে জাতকের অবনতি হয়। জাতকের গুপ্ত শত্রুর এবং প্রবল শত্রুর যথেষ্ট ভয় থাকে এবং অনেক সময় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সৃষ্টি হয়। এই শক্রর দল প্রায়ই তার আত্মীয়-স্বজনের ভিতর, পাড়াপড়শীর ভিতর, এমন কি তার অধীনস্থ কর্মচারীর ভিতরেও দেখা যায়। অনেক সময় গুপ্তশত্রুরা তার নামে বেনামী চিঠি দেয়; কি কোন রকম ছাপানাে কাগজ, কি বই, বের করে। কর্কটের সাধারণ রােগ হচ্চেবক্ষঃস্থলের রােগ, পেটের রােগ এবং বাত ও সায়েটিকা (Siatica)। ভ্রমণের সময়, কি বিদেশে বাসের সময়, ঘােড়া থেকে পড়া, কিম্বা ঘােড়ার দ্বারা আঘাত অথবা অন্য কোন দুর্ঘটনা হতে পারে। তা ছাড়া, মানুষের হাত থেকেও কোন রকম আঘাত পাওয়া বিচিত্র নয়। 

যে সকল খ্যাতনামা ব্যক্তির জন্ম সময়ে কর্কট লগ্নের উদয় হয়েছিল তাদের কয়েকজনের নাম : শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্ৰীশ্ৰী বুদ্ধদেব, শ্ৰীশঙ্করাচাৰ্য, স্বর্গীয় রাজা রাধাকান্ত দেব, কাইসার দ্বিতীয় উইলহেলম, স্বর্গীয় কবিরাজ গঙ্গাপ্রসাদ সেন, মহামহােপাধ্যায় পঞ্চানন তর্করত্ন, শ্রীযুক্ত অরবিন্দ ঘােষ, ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্যালজ্যাক, বিসমার্ক, আলেকজাণ্ডার ডুমা প্রভৃতি। 

প্রিয় পাঠক, শব্দের বানানে ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এই বিষয় আরো পোস্ট পড়তে সূচিপত্র দেখুন। — গণক্কার।
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url