মকর লগ্নে জন্মানো ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়

যার মকর লগ্নে জন্ম, তাঁর এই রকম ফল হয়ে থাকে। 
মকর লগ্ন

মকর লগ্নের জাতকের প্রকৃতিতে সন্দিগ্ধচিত্ততা ও দুঃখবাদীর ভাব একটা প্রধান লক্ষণ। সব জিনিষের অশুভ দিকটাই তার মনে আগে অাসে। তার মধ্যে যথেষ্ট উচ্চাভিলাষ আছে এবং অনেক বড়-বড় কাজ তার দ্বারা হতে পারে; কিন্তু তা সত্ত্বেও, তার জীবন প্রায়ই সুখহীন হয়। তিনি একটু কড়া মেজাজের লােক হয়ে থাকেন এবং তার কথাবার্তা স্পষ্ট এবং রূঢ় ভাবাপন্ন হওয়া সম্ভব। জাতক বহুভাষী হতে পারেন; কিন্তু তার উচ্চারণের কোন রকম দোষ বা অসাধারণত্ব থাকতে পারে। তিনি প্রায়ই প্রভুত্বপ্রিয় হয়ে থাকেন— অপরিচিতের সম্মুখে তিনি প্রায়ই নির্বাক ও গম্ভীর হয়ে থাকাটা পছন্দ করেন; কিন্তু পরিচিতদের মধ্যে তেমনি তার মুখ ছােটে অবাধে। তাঁর কথা-বার্তার মধ্যে যুক্তির চেয়ে জোর বেশী। তার ইচ্ছাশক্তি প্রবল, এবং তিনি যে কোন উপায়ে হােক অভীপিত কর্ম্ম সাধন করে তবে ক্ষান্ত হন। তার যেমন উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রদল, তেমনি অধ্যবসায় এবং একটা কাজে লেগে থাকবার ক্ষমতাও আছে— যে কোন কাজ শেষ করবার জন্য অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করা তার স্বভাব-সিদ্ধ। মধ্যে মধ্যে একটা নৈরাশ্য ও অবসাদের ভাব তার মধ্যে আসে বটে, কিন্তু তিনি সহজে তা দূর করতে পারেন। তিনি বেশ সপ্রতিভ এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং তার মধ্যে একটা কলহ প্রিয়তাও লক্ষিত হয়। 

কারাে সঙ্গে শত্রুতা হলে, তিনি সহজে তাকে ক্ষমা করেন না— অনেকদিন ধরে তার মনে প্রতিশােধস্পৃহা জেগে থাকে। জাতক একটু বৃদ্ধ-ভাবাপন্ন হতে পারেন; তার মধ্যে হিসাব ও সাবধানতা যথেষ্ট আছে। তিনি বেশ বুঝে সুঝে, চারদিক্‌ দেখে-শুনে কাজ করতে চান— এবং অধিকাংশ সময় তা করেও থাকেন। কিন্তু যখন একটা কোন কাজের উপর ঝোক চাপে, তখন হিসাব-জ্ঞান বড় থাকে না; ফল, ভাল-মন্দ যাই হােক, শেষ পর্যন্ত না-দেখে ছাড়তে চান না। স্নেহ-প্রীতির ব্যাপারে জাতকের মধ্যে আন্তরিকতা থাকবে বটে, কিন্তু, অদৃষ্টচক্রে স্নেহের পাত্রের সঙ্গে মিলন কখনই দীর্ঘকাল স্থায়ী হতে পারবে না, এবং পুরাতনের জন্য মন কাদলেও, তাকে নূতন স্নেহের বন্ধন খুঁজতে হবে। সাধারণতঃ নিজের চেষ্টা, বুদ্ধি ও গুণপণার জোরে জাতক অর্থোপার্জন ও প্রতিষ্ঠা লাভ করে থাকেন— কিন্তু বন্ধু-বান্ধবের সাহায্যেও তার অর্থাগমের সম্ভাবনা আছে। ফাটকার (Speculation) ব্যাপারেও জাতকের কিছু লাভ হতে পারে। কোন স্ত্রীলােকের তরফ থেকে অথবা কোন উদ্ভাবন-আবিষ্কারের দ্বারা এবং কোন সংসদ পরিষদের সংশ্রবেও, তার অর্থলাভ হওয়া বিচিত্র নয়; কিন্তু, প্রধানতঃ তার নিজের বিদ্যাবুদ্ধির উপরই তাকে নির্ভর করতে হয় বেশী। জাতকের ভ্রাতাভষ্মীর সংখ্যা প্রায়ই বেশী হয় (যদি-না কোষ্টাতে বিশেষ বিরুদ্ধ-যােগ থাকে)—কিন্তু ভ্রাতাভগ্নীর জন্য জাতককে অনেক ঝাট ও অশাস্তি ভােগ করতে হয়— তাদের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদের জন্য জাতককে অনেক দুঃখ পেতে হয়, কিম্বা তাদের সঙ্গে জাতকের শত্রুতাও হতে পারে। অন্য আত্মীয়-স্বজনের জন্যও জাতককে নানারকমে বেগ পেতে হয়। 

মকর লগ্নের জাতকের পিতা অথবা মাতার জন্যও কিছু অশাস্তি ভােগ করতে হয় এবং কোন গুরুজনের দ্বারা উন্নতির বাধা হতে পারে। পিতা বা মাতার জন্য জাতকের বিবাহিত জীবনে কোন অশান্তি উপস্থিত হওয়া অসম্ভব নয়; পারিবারিক কারণে অথবা নিজের অবস্থা বিপর্যয়ের জন্য ও জাতকের বিবাহে বাধা বা বিলম্ব হওয়া বিচিত্র নয়— জাতকের বিবাহিত জীবন প্রায়ই সুখকর হয় না। জাতকের স্থলপথে অনেক ভ্রমণ হয়ে থাকে, এবং অনেক সময় কোন গুহ কারণে অথবা কর্ম্মসিদ্ধির জন্য জাতককে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভ্রমণ করতে হয়। ভ্রমণের সময় গুপ্তশত্রুর দ্বারা কোনরূপে আক্রান্ত হবার আশঙ্কাও দেখা যায়। শৈশবে অথবা বাল্যকালে জাতকের আগুন থেকে কোন রকম দুর্ঘটনা অথবা অস্ত্রের দ্বারা আঘাত কিম্বা অস্ত্রোপচারের আশঙ্কা আছে। অতি-শৈশবে আবাতাবি লেগে হাতের বা পায়ের কোন রকম বিকৃতিও অসম্ভব নয়। 

অল্পবয়সে জাতকের পিতৃবিয়ােগ কিম্বা পিতার সঙ্গে বিচ্ছেদ হতে পারে। জাতকের সন্তানসংখ্যা খুব বেশী হয় না-পুত্রের চেয়ে কন্যার সংখ্যাই প্রায় বেশ হয়। সন্তানের জন্য জাতকের প্রতিষ্ঠা বা কর্ম্মের কোন রকম বাধা বিঘ্ন উপস্থিত হতে পারে; অথবা সম্মান ও প্রতিষ্ঠার জন্য সন্তানের কোন ক্ষতি হওয়া সম্ভব। স্নেহ-প্রীতির ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও তজ্জন্য সম্মান বা প্রতিষ্ঠাহানির আশঙ্কাও আছে। ভ্রমণের সময় বা ভ্রমণের দরুণ, জাতকের কোন রকম পীড়া বা শারীরিক কষ্ট হতে পারে; অথবা, অস্বাস্থ্যের জন্যও মধ্যে মধ্যে তাকে ভ্রমণ বা স্থান-পরিবর্তন করতে হয়। জাতকের বিবাহিত জীবন খুব সুখের হয় না। তিনি খুব অল্পবয়সে বিবাহ করতে পারেন এবং একাধিক বিবাহ করতে পারেন; কিম্বা, বিবাহের সম্পূর্ণ বিরােধী হতে পারেন। একাধিক বিবাহ হলে প্রথম স্ত্রীর প্রায় মৃত্যু হয় এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর সাহচর্যে জাতকের সুখ ও সৌভাগ্যলাভ হয়ে থাকে। বিবাহ বা বিবাহিত জীবনের ব্যাপার তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার পথে একটা মস্ত অন্তরায় হয়ে দাড়াতে পারে এবং হৃদয়ের ব্যাপার থেকে তার জীবনে একটা গুরুতর পরিবর্তন ঘটে— তা সে ভালর জন্যই হোক আর মন্দর জন্যই হােক। 

স্ত্রীর এবং দাম্পত্য জীবনের প্রভাব তার কর্মজীবনেও অভিব্যক্ত হবে এবং তা ভালই হােক আর মন্দই হােক, সাধারণের কাছে সে প্রভাবের মর্ম অবিদিত থাকবে না। জাতকের কর্মে যত উন্নতি হবে অথবা যত খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠালাত হতে থাকবে, সেই সঙ্গে তার শক্ত ও প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যাও বেড়ে চলবে— এমন কি আত্মীয়-স্বজন বা পরিবারস্থ ব্যক্তিরাও তার উন্নতি ঈর্ষার চক্ষে দেখবেন, এবং কুটুম্ব ও স্ত্রী-পক্ষের বা মাতৃ-পক্ষের আত্মীয়ের মধ্যে কেউ কেউ তার ক্ষতি করতে যথেষ্ট চেষ্টা করবেন। তার বন্ধুদের মধ্যে একজিকিউটিভ, কর্মচারী, পুলিশ বিভাগ, সামরিক বিভাগ, পােষ্ট টেলিগ্রাফ, ইঞ্জিনীয়ারিং প্রভৃতি বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, ভূম্যধিকারী, চিকিৎসক প্রভৃতি অনেক থাকবে। শেষ বয়সে মৃত্যু তার বন্ধুদের মধ্যে অনেককেই এক এক করে সরিয়ে নিয়ে যাবে। বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ তার শেষ জীবনে তার উপর খুব বেশী প্রভাব স্থাপন করবেন, কিন্তু সে প্রভাবে তার কর্ম্মহানি, অপবাদ বা প্রতিষ্ঠাহানির কারণ হয়ে দাড়াবার আশঙ্কা আছে। অন্তত সেই প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে তিনি এমন কোন কাজ করে বসবেন, যার জন্য তাকে অনুতাপ করতেই হবে। 

তা ছাড়া, অনেক আত্মীয়স্বজন বা অনুগত ও প্রতিপালিত ব্যক্তি তার শত্রু হয়ে দাড়াতে পারে অথবা কতকগুলি শক্র একত্র মিলিত হয়ে ষড়যন্ত্র করতে পারে। সেই শত্রুদের মধ্যে সম্রান্ত ও পদস্থ ব্যক্তি, এবং নগণ্য ও সামান্য ব্যক্তি, দুই-ই থাকা সম্ভব। শেষ বয়সে জাতকের আশাভঙ্গ ও কর্ম্মহানি বা প্রতিষ্ঠাহানির আশঙ্কা আছে। জলযাত্রা বা তীর্থযাত্রা জাতকের পক্ষে বিপদসঙ্কুল হওয়া সম্ভব। তাতে তার ক্ষতি, পীড়া, শারীরিক কষ্ট ও নানারকম অশান্তি হতে পারে। ভ্রমণের সময় বিবাদ-বিসম্বাদের আশঙ্কাও আছে; কিম্বা, এ-ও হতে পারে যে, ক্ষতি, বিবাদ ও অসুস্থতা প্রভৃতি কারণেই তার জলযাত্রা বা তীর্থযাত্রা আৱশ্যক হয়ে পড়বে। ভ্রমণকালে কোন ব্যক্তির দ্বারা আঘাত-প্রাপ্তি কিম্বা বাহন থেকে পতন প্রভৃতি উৎপাতেরও ভয় আছে। জাতকের স্বাস্থ্যহীনতার প্রধান কারণ— ঠাণ্ডা-লাগা, শ্লেষ্মার বিকার এবং রক্ত চলাচলের অথবা বায়ু চলাচলের বাধা। হাতে ও হাটুতে বাতের ব্যথা, পেটে বায়ুজনিত শূলব্যথা, পেটফাঁপা, মৃগী, পক্ষাঘাত প্রভৃতির প্রবণতা জাতকের মধ্যে থাকা সম্ভব। বিষাদখিতা এবং রােগােন্মাদ প্রভৃতি বায়ু-রোগও জাতকের হতে পারে। অজীর্ণ-রােগ, পতনাদি, অস্ত্রোপচার, রাজরােষ প্রভৃতি কারণে জাতকের মৃত্যু হতে পারে। অপরের সঙ্গ, আমােদ-প্রমােদ, সঙ্গীতাদির চর্চা প্রভৃতি দ্বারা জাতকের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। জাতকের পক্ষে বেশী ঔষধ ব্যবহার না করাই ভাল।

লগ্নফল যে সকল খ্যাতনামা নরনারীর মকর লগ্নে জন্ম হয়েছিল তাদের কয়েকজনের নাম: ওয়েল, ছত্রপতি শিবাজী, আলেকজাণ্ডার দি গ্রেট, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অক্ষয়চন্দ্র সরকার, ডাক্তার ভাণ্ডারকর, ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার, জষ্টিস স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বিখ্যাত অভিনেতা রাম নােভাররা, নেল হামিণ্ট, অভিনেত্রী জেনিভিত টবি প্রভৃতি।

প্রিয় পাঠক, শব্দের বানানে ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এই বিষয় আরো পোস্ট পড়তে সূচিপত্র দেখুন। — গণক্কার।
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url