বৃশ্চিক লগ্নে জন্মানো ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়

যার বৃশ্চিক লগ্নে জন্ম, সেই ব্যক্তির চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য কেমন হয়?
বৃশ্চিক লগ্ন

বৃশ্চিক লগ্নের জাতকের প্রধান লক্ষণ অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তা; তার মধ্যে অহং প্রবল— প্রতিবাদ তিনি মােটেই সহ্য করতে পারেন না। তার পছন্দ এবং না-পছন্দ খুব পরিষ্কারভাবে নির্দিষ্ট এবং তার জীবনের অধিকাংশ কাজ ঐ পছন্দ না-পছন্দের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তার প্রকৃতির মধ্যে বিবাদ-প্রিয়তা খুব বেশী এবং অনেক সময় তিনি বিবাদে প্রবৃত্ত হন কেবল প্রতিপক্ষের উপর জয়লাভ করবার আনন্দটুকু ভােগ করবার জন্যই। অবশ্য, শিক্ষাদ্বারা পরিমার্জিত হলে এই বিবাদের প্রবৃত্তি মৌখিক তর্ক-বিতর্ক মাত্রে পরিণত হতে পারে। তার বাক্য পরিষ্কার ও ভয়শূন্য; তার মধ্যে দ্বিধা-সঙ্কোচ বলে কিছু নেই— তার বাক্যের মধ্যে মনের ভাব স্পষ্ট দেখা দেয়; মামুলি শিষ্টাচারের মুখােস দিয়ে বক্তব্য মােলায়েম করে তােলা তার প্রকৃতির বিরুদ্ধ। তিনি যা বলেন সােজা ভাষায় বলেন— অপ্রিয় সত্য বলতে কারাে খাতির রাখেন না। তার প্রকৃতিতে আত্মনির্ভর ও আত্মপ্রত্যয় একটু বেশী; নিজের মত ও ধারণা তার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ। জাতকের ক্রোধ অতি প্রচণ্ড; কিন্তু তার প্রতিশােধ-স্পৃহা বেশী দিন স্থায়ী না-ও হতে পারে। তাঁর আচার-ব্যবহার ও ভাবভঙ্গী পৌরুষ-ব্যঞ্জক ও কর্কশ এবং তার নিজের স্বার্থের দিকে বেশ খর দৃষ্টি থাকে। 

বৃশ্চিক লগ্নের জাতকের মধ্যে আত্মপ্রিয়তা প্রবল বলে অপরের দোষ অতি সহজে তার নজরে পড়ে এবং বেশ তীক্ষ ভাষায় অপরের সমালােচনা করতে জাতকের বাধে না। অপ্রিয় বাক্য এবং ছিদ্রানুসন্ধান— এই দুই দোষের জন্য তার অনেক শত্রুর সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার শক্তিও জাতকের মধ্যে যথেষ্ট আছে এবং নিজের ক্ষতি হবে জেনেও শেষ পর্যন্ত শত্রুর সঙ্গে লড়াই করতে তিনি পেছপা হন না। তার মধ্যে কল্পনাশক্তি যথেষ্ট আছে বটে; কিন্তু সে বিষয়ে সঙ্গতি ও সামঞ্জস্যের একটা অভাব লক্ষিত হতে পারে। তার মধ্যে একগুয়েমি এবং রহস্যভেদ করবার একটা প্রবল আকাঙ্কা দেখা যায়। যা-কিছু গােপন, যা-কিছু রহস্যময় তা তাকে পীড়িত করে তােলে; সেইজন্য তার মধ্যে ডিটেকটিভ, প্রত্নতাত্ত্বিক, রসায়নবিদ, গবেষণাকারী এবং দার্শনিকের একটা ভাব দেখা যায়। সংহরণ এবং সংগঠন এ দুয়ের শক্তিই তার মধ্যে আছে— যে কোন জিনিষ ভেঙে ফেলে আবার নতুন করে গড়তে তিনি পারেন। তার মধ্যে সব বিষয়েই একটা বাড়াবাড়ির ভাব দেখা যায়। কাজ-কর্মেই হােক কি আমােদ-প্রমােদেই হােক, তিনি যা ধরেন তার চূড়ান্ত করে ছাড়েন। তার কাজের গতি বা বারা হাজার বাধা বিঘ্ন উপস্থিত হলেও বদলাতে চান না। জাতকের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা খুব প্রবল। তিনি যশ ও প্রতিষ্ঠা একান্তভাবে কামনা করেন এবং প্রায়ই যে কোন ব্যাপারে হোক, উচ্চপদ ও সম্মান লাভ করেন। যুদ্ধবিদ্যা, পূর্ত্ত বা ইঞ্জিনীয়ারিং বিদ্যা, পুলিশ বা শাসন সম্পর্কীয় কাজ প্রভৃতিতে জাতকের পটুত্ব থাকা সম্ভব এবং সরকারী যে কোন বিভাগের কাজে জাতক কৃতিত্ব দেখাতে পারেন।

প্রথম জীবনে জাতকের আর্থিক অবস্থা কতকটা অনিশ্চিত থাকে, কিন্তু জীবনের শেষার্ধে জাতক বেশ উন্নতি করতে পারেন। বাণিজ্যের দ্বারা বা বিবাহসূত্রে জাতকের অর্থলাভ হতে পারে; বিদেশে, বৈদেশিক কোন ব্যাপারে, জলযাত্রা সম্পর্কিত কোন ব্যাপারের সংশ্রবে, সরকারী কাজে অথবা ঘােড়দৌড়, লটারি, ফাটকা প্রভৃতি থেকে জাতকের আয় ও অর্থলাভ হওয়া সম্ভব। জাতকের আয়ের দুটো বিভিন্ন পথ থাকতে পারে। অনেক সময় তিনি এমন দুটো কাজ করে অর্থোপার্জন করে থাকেন যার একটা আর একটা হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের; কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তার অবস্থা প্রায়ই বেশ স্বচ্ছল ও সম্পন্ন হয়ে ওঠে। কোষ্ঠীতে যদি অন্য প্রবল যােগ না-থাকে, তাহলে জাতকের ভাই বােনের সংখ্যা খুব বেশী হয় না; অথবা ভাই-বােন হলেও তারা প্রায়ই দীর্ঘজীবী হয় না; অনেক ক্ষেত্রে উচ্চস্থান থেকে পতন, যানবাহনের কোন দুর্ঘটনায় অথবা ঠাণ্ডা লেগে কোন পীড়া হয়ে ভাই-ভগ্নীর মৃত্যু হয়ে থাকে। ভাই-ভগ্নী যদিই জীবিত থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে জাতকের ভালরকম বনিবনাও হয় না। জাতকের পিতার সঙ্গে জাতকের মনের মিল প্রায়ই হয়ে থাকে এবং পিতার অবস্থাও ভাল হাওয়া সম্ভব; কিন্তু, তার উন্নতি হয়ে ফিরে পতন হতে পারে। পিতার কাছ থেকে জাতক মােটের উপর সাহায্যই পেয়ে থাকেন। জাতকের পুত্র-কন্যার সংখ্যা প্রায়ই বেশী হয় ( যদি-না জাতক অবিবাহিত থাকেন ) এবং যমজ-সন্তান হবার সম্ভবনাও আছে। সন্তানদের ব্যাপারে জাতককে অনেক ব্যয় করতে হয় এবং সন্তানদের জন্য ঝঞ্চাটের কোন গুপ্ত কারণ থাকা সম্ভব অথবা সন্তানদের সম্বন্ধে কোন গুপ্তরহস্য ও থাকতে পারে। 

জাতকের জীবনে গুপ্ত-প্রণয়ের অনেক ব্যাপার আসতে পারে এবং গুপ্তপ্রণয়ের জন্য অর্থ ব্যয় ও ঝঞ্চাটও ঘটতে পারে। বিবাহের ব্যাপারে বাধাবিঘ্ন হওয়া অসম্ভব নয় এবং বিবাহিত জীবনে অসুখী হবার কারণ ঘটতে পারে। জাতকের বিবাহে বিলম্ব অথবা প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু ও দ্বিতীয়বার বিবাহ হতে পারে। স্ত্রীর কোন দীর্ঘকাল-স্থায়ী পীড়া হওয়াও অসম্ভব নয় এবং স্ত্রী কোন গুপ্তশত্রু অথবা চতুষ্পদের দ্বারাও আহত হতে পারেন। জাতকের দুর ভ্রমণ এবং তীর্থযাত্রা বা জলযাত্রার সম্ভাবনা আছে। বিদেশ-ভ্রমণ থেকে প্রত্যক্ষ অথবা পরােক্ষভাবে জাতকের অর্থ ও গৌরব লাত হওয়া বিচিত্র নয়। অর্থশালী ব্যক্তিদের মধ্যে তার অনেক শত্রু থাকতে পারে এবং সমব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেক গুপ্তশত্রু জাতকের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। জাতকের প্রথম বয়সে অনেক বাধাবিঘ্ন ও ঝঞ্চাট অতিক্রম করতে হয়; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সাফল্য ও কৃতকার্যতা লাভ করেন— এমন কি, কোন উচ্চ সম্মানও পেতে পারেন। তাঁর অনুচর ও অনুগতদের মধ্যে তিনি অনেক বিশ্বস্ত বন্ধু পেয়ে থাকেন এবং সাহিত্য বা শিল্পজগতেও তার অনেক বন্ধু হয়ে থাকে। ২৮ থেকে ৩২ বৎসরের মধ্যে তার কোন মনােকষ্ট বা কোন স্নেহের পাত্রের মৃত্যু অথবা নিজের হৃদ্রোগ হতে পারে। তার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে অনেক উচ্চপদস্থ ও প্রতিষ্ঠাশালী লােক থাকা সম্ভব। কিন্তু আত্মীয়-স্বজনের জন্য তাকে অনেক ঝাট পােহাতে হয়। জাতক কাজকর্মে কিম্বা আমােদ-প্রমােদে বাড়াবাড়ি, অনিয়ম ও অত্যাচার করার জন্য, নিজেই নিজের স্বাস্থ্য-ভঙ্গের কারণ হতে পারেন।

তার মাথা অথবা চোখের কোন অসুখ হতে পারে— মাথায় কিম্বা চোখে আঘাত লাগাও বিচিত্র নয়। জননেন্দ্রিয়ের পীড়া, গুহদেশের পীড়া, উপদংশ, মেহ, অর্শ, ভগন্দর প্রভৃতি সম্বন্ধে জাতকের সতর্ক থাকা উচিত। আগুন, আগ্নেয়াস্ত্র কিম্বা কোন লৌহ যন্ত্রের দ্বারা আঘাত প্রাপ্তিরও বিশেষ আশঙ্কা থাকে। মাথায় কোন রকম আঘাত কি অস্ত্রাঘাত হতে পারে এবং কোষ্ঠীতে চন্দ্র ও বুধ বিশেষ পীড়িত হলে উন্মাদ রােগের আশঙ্কাও দেখা যায়। জাতকের পায়ে কোন চর্মরােগ বা ক্ষত হতে পারে এবং হাতে গুরুতর আঘাত লাগবার আশঙ্কা দেখা যায়— এমন কি একটি হাত একেবারে অকর্মণ্য হয়ে যেতে পারে। জাতকের দেহে রােগের বীজ অনেক সময় স্থায়ী আশ্রয় গ্রহণ করে। তার শরীর থেকে রােগ দূর করতে হলে, অনেক সময় বিষ-চিকিৎসা ( Injection ) প্রভৃতি আবশ্যক হয়। সাধারণতঃ আর্দ্রতার চেয়ে শুষ্কতা তার স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশী অনুকুল। পর্বতের উপরে শুক স্থানে বাস, শুষ্ক দ্রব্যাদি আহার এবং দেহ যতদূর সম্ভব শুষ্ক রাখা তার স্বাস্থ্যোন্নতির পক্ষে সাহায্য করবে। 

যে সকল বিখ্যাত নরনারীর জন্মকালে বৃশ্চিক উদিত হয়েছিল তাদের কয়েকজনের নাম কবি কোলরিজ, বিখ্যাত অভিনেতা অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফী, স্বর্গীয় কেশবচন্দ্র সেন, ছায়াচিত্রের মরিস সীভেলিয়র, জোয়ান ক্রফোর্ড, এ্যাডলফ মেঞ্জু, কন্সট্যান্স বেনেট প্রভৃতি।

প্রিয় পাঠক, শব্দের বানানে ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এই বিষয় আরো পোস্ট পড়তে সূচিপত্র দেখুন।— গণক্কার।
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url