ঘামাচি কি? এর প্রকারভেদ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রচণ্ড গরমে ঘামাচিতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা অনেক। গরমকালে কমবেশি অনেকেরই ঘামাচি হয়। সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে বৈদ্যুতিক পাখা আজকাল নিম্ন মধ্যবিত্ত পর্যন্ত প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যায়। গ্রাম - গঞ্জে বিদ্যুতের সরবরাহ, মােটা সুতির মশারির পরিবর্তে নেটের মশারি, সাবানের ব্যবহার, হালকা পাতলা কাপড়ের প্রচলন ইত্যাদি সব কিছু মিলিয়ে ২০-২৫ বছর পূর্বে মানুষ যে হারে ঘামাচিতে আক্রান্ত হতাে এখন আর তা হয় না। আর তাই ঘামাচি কি এবং দেখতে কেমন তা অনেকেই ভুলে গেছেন। ঘামাচি হলে এখন অনেকে তাকে মারাত্মক চর্মরােগ মনে করছেন। ঘামাচি সম্বন্ধে সঠিক ধারণা দেয়ার জন্যই এই লেখা।

ঘামাচি কি? 
ঘাম তৈরি হওয়ার পর যে সরু নল বা ডাক্ট দিয়ে তা শরীরের বাইরে চলে আসে তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ঘাম তৈরি হওয়া বন্ধ থাকে না। ফলে ক্রমবর্ধমান ঘামের চাপে সেই নল বা ঘাম তৈরির গ্রন্থিটিই ফেটে যায় এবং ঘাম চামড়ার নিচে জমা হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ঘামাচির সৃষ্টি করে। এ জাতীয় সমস্যা সাধারণত গরমকালে হয়ে থাকে, যখন বাতাসের আর্দ্রতা খুব বেশি থাকে।

প্রকারভেদ:

মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনাঃ এ ধরনের ঘামাচি দেখতে স্বচ্ছ ছােট ছােট গােলাকার, পানি জাতীয় ফুসকুঁড়ি (ভেসিকল) আকারে দেখা দেয়। এতে কোন উপসর্গ বা চুলকানির উদ্রেক হয় না। 
মিলিয়ারিয়া রুব্রাঃ এ জাতীয় ঘামাচিই সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। এতে ছােট ছােট গােলাকার দানা অথবা পানি জাতীয় দানা দেখা দেয়। লাল বর্ণের হয়ে থাকে এবং প্রচন্ড চুলকায়। 
মিলিয়ারিয়া পাস্তুলােসাঃ এ জাতীয় ঘামাচি সাধারণ একজিমা জাতীয় (ডার্মাটাইটিস) ক্ষতস্থানে হয়ে থাকে। এতে পূজের সৃষ্টি হয়। 
মিলিয়ারিয়া প্রােফান্ডাঃ এ জাতীয় ঘামচি দেখতে মাংসের রঙের মতাে, ছােট ছােট ফুসকুঁড়ি। এ জাতীয় ঘামাচি চুলকায় না।

প্রতিক্রিয়া 
ঘাম সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে শরীরে সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপকে বের করে দেয়া। ঘামাচি হওয়াতে ঘাম বেরিয়ে আসতে পারেনা। ফলে গরমে কাজ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে (শরীরে অতিরিক্ত তাপ জমে যেতে থাকে), মাথা ঘুরায়, মাথা ব্যথা করে, বমি বমি ভাব হয় এবং সর্বোপরি আক্রান্ত ব্যক্তি ঝিমিয়ে পড়ে। জ্বর জ্বর ভাব থাকে সব সময়। অবশ্য, অল্প ঘামাচি হলে এ জাতীয় প্রতিক্রিয়া হয় না। অন্যান্য উপসর্গ, যেমন- অতিরিক্ত চুলকানি, চুলকাতে চুলকাতে অনেক সময় বড় বড় ফেঁাড়া দেখা দেয়। অতিরিক্ত লাল হয়ে একজিমার মতাে হয়ে যেতে পারে।

ঘামাচি চেনার প্রধান শর্ত 
এটি কখনও লােমের গােড়াতে আক্রান্ত করবে না।

চিকিৎসা 
ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকতে হবে। তাই প্রচলিত আছে যে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে গােসল করলে ঘামচি সেরে যায়। এয়ারকন্ডিশন রুম হলে খুবই ভাল। তবে ফ্যানের হাওয়াও উপকারী। দিনে কয়েকবার ঠান্ডা পানি দিয়ে গােসল করা। বেবি টেলকম পাউডার ব্যবহার করা। ঢিলেঢালা সুতি জামাকাপড় পরা বা সম্ভব হলে কিছুদিন খালি গায়ে থাকা। ক্যালমিলন লােশন (ক্যালামিলন) কঁকিয়ে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে মেখে ঘন্টাখানেক পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এ রকম ৩/৪ দিনের বেশি করা যাবে না। খুব বেশি লালভাব বা একজিমার মতাে হয়ে গেলে কিছুদিন কিউরল অয়েন্টমেন্ট দিনে ২ বার করে ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়। যদি ফোড়া হয়ে যায় তবে এন্টিবায়ােটিক যেমন ফ্লুক্লক্সাসিলিন অথবা ইরাইথ্রোমাইসিন খেতে হয়।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url