নিয়মিত যে ব্যায়াম গুলো চর্চা করলে সুস্থ ও ফিট থাকবেন

সুস্থ থাকতে প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম করুন
ডাঃ এম এম ঘটক

ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ বছর বয়সের পর সুস্থ থাকার জন্য জীবনযাপনের কী কী নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে? ৩০-৩৫ বছর বয়সের পর বিশেষ করে ৪০ এর পর শরীর এবং মন এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়ায় যে কিছু সতর্কতা অন্তত মেনে না চললে সুস্থ থাকা বেশ মুশকিল। এই সময় থেকেই শরীরে নানারকম ক্ষয়ক্ষতির সূত্রপাত হতে শুরু করে। মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠা বাড়ে। পরিশ্রম বা দৌড়াদৌড়ির ব্যাপারটা কমে আসে। ফলে ওজন বাড়া, রক্তচাপ বাড়া থেকে শুরু করে হৃদরােগের সূত্রপাত হওয়া সম্ভব। পরিসংখ্যান বলছে ৩০-৪০ বছর বয়সী এগজিকিউটিভদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা খুব বেশি। এবং আশ্চর্যজনকভাবে এর অনেকটাই নির্ভর করছে পেটের চর্বির ওপর। পেটের মাপ ১০০ সেন্টিমিটারের বেশি হলে স্বাভাবিকের তুলনায় এই জাতীয় অসুখে মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৪ গুণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার বাড়াবাড়ি। অতএব ব্যস ৪০ এর ধারে কাছে পৌঁছনাের আগেই খাওয়া দাওয়ার সাবধানতা এবং হালকা থেকে ভারী ব্যায়াম শুরু করা দরকার।

❍ প্রশ্ন: কী রকম?

☛ উত্তর: এই সময় থেকে বেশি খাওয়ার অভ্যেস, অনিয়ম এবং উল্টোপাল্ট। খাওয়ার প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। বিশেষ কোনও অসুখ থাকলে বিশেষ বিধি নিষেধ মেনে চলতে হবে। ব্যায়াম শুরু করার প্রথম ধাপ হিসেবে চালু করতে হবে মর্নিংওয়াক। দিনে অন্তত ৪ কিলােমিটার। কত জোরে হাঁটবেন না কি দৌড়বেন সেটা ঠিক করার জন্য ট্রেডমিল টেস্ট করে নিলে ভাল হয়। কতখানি চাপ নিতে পারবে সেটা বােঝা যাবে এই টেস্ট করলে। না করাতে চাইলে আস্তে আস্তে হাঁটার গতি বাড়ান। প্রথম দিকে সময় লাগবে। কিন্তু ধীরে ধীরে এক ঘণ্টার মধ্যে ৪ কিলােমিটার হাঁটা অভ্যেসের মধ্যে এসে যাবে। এভাবে কিছুদিন চলার পর ৪৫ মিনিটে ৪ কিলােমিটার বা একঘণ্টায় ৬ কিলােমিটার পর্যন্ত হাঁটতে পারবেন। কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে বেশি হাঁটাহাঁটি করলে অসুবিধে হতে পারে। যেমন কিডনি বা হার্টের অসুখ থাকলে, হাঁটু ব্যথা, ফুসফুসের মেয়াদি রােগে বা রক্তাল্পতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে। রােগ আয়ত্তে আসার পর ডাক্তারের পরামর্শমতাে হাঁটার ব্যাপারটা বাড়াতে কমাতে হবে। হাঁটু ব্যথা থাকলে হাঁটাহাঁটি হবে মূলত সমতল রাস্তায়। বেশি ব্যথায় হাঁটার বদলে কিছু স্ট্যাটিক এক্সারসাইজ ভাল ফল দেয়। এই সমস্ত কোনও কারণে হাঁটার পরিমাণ যদি কমাতে হয়, খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে সচেনতা আরও বাড়াতে হবে। হাঁটাহাঁটি করে শরীরের সক্ষমতা মােটামুটি একটা জায়গায় আসার পর পেট কমানাের জন্য বিশেষ কয়েকটি ব্যায়াম শুরু করা দরকার।
(১) লেগ রাইজিং উইথ রেসিস্ট  ান্স
(২) সিট আপ,
(৩) কমপ্রেশন বেল্ট। লেগ রাইজিংয়ে চিত হয়ে শুয়ে দু’পা জড়াে করে সােজা উপর দিকে তুলতে হবে। একজন ট্রেনার থাকবেন যিনি পা দুটোকে ঠেলে নীচের দিকে নামানাের চেষ্টা করবেন। এই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলে পেটের উপর চাপ পড়বে। প্রথম দিকে দিনে ২০-২৫ বার করে শুরু করে বাড়াতে বাড়াতে ১০০ পর্যন্ত নিয়ে গেলে ভাল। সিট আপের নানান ভঙ্গিমা আছে। সহজ থেকে কঠিন। ধীরে ধীরে সহজ থেকে কঠিনের দিকে যেতে হবে। এবং ১০-১৫ বার থেকে বাড়িয়ে ৫০ বা ১০০। সকালে ২ ঘন্টা বিকেলে ২ ঘণ্টা পেটে চাপা বেন্ট পরতে পারলে পেট চটপট কমবে। এছাড়া কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ এবং যােগ ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পবামর্শ মতাে।

❍ প্রশ্ন: পেটে বেল্ট পরলে নাকি হার্নিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে?

☛ উত্তর: দিনরাত বেল্ট পরে থাকলে পেটের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে হার্নিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে বেল্ট পরার কথা বলা হচ্ছে দিনে ৪ ঘণ্টার জন্য। এবং সিট আপ, লেগ রাইজিংয়ের সঙ্গে। সিট আপ এবং লেগ রাইজিং নিয়মিত করলে পেটের মাংসপেশিব স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে।

❍ প্রশ্ন: লেগ রাইজিং বা সিট আপ করলে তাে অনেক সময় কোমরে ব্যথা হয়।

☛ উত্তর: কোমরের কাছে মেরুদণ্ডে কিছু ত্রুটি থাকলে এতে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে স্ট্যাটিক এক্সারসাইজ করতে হবে। পা বেঁধে বা পায়ের উপর ওজন দিয়ে পা উপরে তােলার চেষ্টা করতে হবে। পা উঠবে না কিন্তু পেটে চাপ পড়বে। কোমরের মাংসপেশিতে যদি ব্যথা থাকে এতেও ব্যথা বাড়বে। সেক্ষেত্রে পেটের ব্যায়াম করানাে একটু মুশকিল। মর্নিং ওয়াক, জগিং এসবের ওপরই নির্ভর করতে

❍ প্রশ্ন: হাঁটতে কি সকালেই হবে? বিকেলে হাঁটলে হবে না?

☛ উত্তর: সকালে হাঁটতে বলার দুতিনটে কারণ আছে। রাতে ভাল বিশ্রামের পর সকালে খােলা হাওয়ায় হাঁটতে শুরু করলে সমস্ত শরীরে খুব ভাল ভাবে রক্ত সঞ্চালন হতে শুরু করে। শরীরের প্রতিটি প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা শুরু হয় বিজ্ঞান সম্মতভাবে। মন এ সময় কিছুটা হালকা থাকে এবং তাড়াহুড়াে থাকে না বলে হাঁটার সঙ্গে মানসিক তৃপ্তর ব্যাপারটাও জড়িয়ে যায়। সকালে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে, হাঁটার সুবিধেও।

❍ প্রশ্ন: রাস্তায় না বেরিয়ে যদি ট্রেডমিলে হাঁটা অভ্যেস করা যায়?

☛ উত্তর: কোনও অসুবিধে নেই। তবে সেক্ষেত্রেও চেষ্টা করবেন সকাল সকাল ব্যাপারটা সেরে ফেলতে।

❍ প্রশ্ন: ট্রেডমিল বেশি করলেও তাে অনেক সময় হাটুতে কোমরে ব্যথা হয়।

☛ উত্তর: শুরুতেই বেশি করবেন না। বিশেষ করে যদি ওজন বেশি থাকে। বেশি ওজন নিয়ে হঠাৎ করে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে হাঁটু, কোমরে চাপ পড়ে ব্যথা শুরু হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করার কথা বলা হয়।
(১) খুব আস্তে আস্তে হাঁটার গতি বাড়ানাে এবং
(২) বড় ধরনের ব্যায়াম শুরু করার আগে খাওয়াদাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ এনে ওজন অন্তত দু'এক কোজ কমিয়ে আনা।

❍ প্রশ্ন: অনেকক্ষণ একভাবে বসে কাজ করলেও তাে হাঁটু বা কোমরে ব্যথা হয়?

☛ উত্তর: এমনিতে যদি ব্যথা না থাকে, শুধুমাত্র অনেকক্ষণ একভাবে বসার দরুন ব্যথা হয়, মাঝে মাঝে বসার ধরণ পাল্টালে ব্যথা কম থাকবে। ঘণ্টাখানেক একভাবে বসার পর ১০-১৫ মিনিট হাঁটাচলা এবং সামান্য দু একটি ব্যায়াম করে পরের একঘণ্টা যদি একটু অন্যভাবে বসা যায় এবং পর্যায় ক্রমে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় কোমর এবং হাঁটু ব্যথার হাত থেকে মুক্তি পাবেন।

❍ প্রশ্ন: কী ধরনের ব্যায়াম করতে হবে?

☛ উত্তর: বেশ কয়েকটি ব্যায়াম আছে। বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়ে করবেন। দু ’ একটির কথা বলছি। চিত হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাজ করে দুহাতের ওপর শরীরের ভর রেখে কোমর উঁচু করে খানিকক্ষণ ওই অবস্থায় থাকতে হবে। ৩ বার করে করবেন। ডানপায়ের হাঁটুর উপর বা পায়ের হাঁটু রেখে কোমর থেকে শরীরের নীচের অংশ ডানদিকে ফেরাতে হবে। শরীরের ওপরের অংশ এবং দু'হাত ফেরাতে হবে বা দিকে। দুদিকেই পর্যায়ক্রমে ৩ বার করে করতে হবে। এছাড়া ভুজঙ্গাসন এবং ধনুরাসন করা যেতে পারে অন্য কোনও সমস্যা না থাকলে কোমর সামনে, পেছনে বা দু'পাশে বাকিয়েও সামান্য ব্যায়াম করা যায়। এছাড়া কোমর ব্যথা থাকলে বা কোমর ব্যথার প্রবণতা এড়াতে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হবে।
(১) কোমরে চাপ পড়ে এমন কাজকর্ম যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়া দরকার। যেমন ভারী জিনিস তােলা বা নিচু হয়ে হ্যাচকা টানে কোনও কিছু সরাননা।
(২) উপুড় হয়ে শুয়ে কিছু পড়া বা লেখা, একটানা একই ভাবে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা, কোমর নিচু করে ঘর ঝাড়া মােছ করা, কনুইয়ে ভর দিয়ে হাতের চেটো মাথার নীচে রেখে দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকলেও কোমরে বা ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
(৩) মাটি থেকে কিছু তুলতে গেলে কোমর ঝুকিয়ে না তুলে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে তােলা দরকার।
(৪) বাসের পেছনে দাঁড়ালে বা মাথার ওপরের রড ধরলে ঝাকুনি কোমরে এসে লাগে। কাজেই বাসের সামনে উঠতে হবে এবং উপরের হ্যান্ডেল না ধরে কাঁধের সমান্তরালে কোনও কিছু ধরতে হবে। বিশেষ করে বয়স যদি ৪০ - এর উপরে হয়।

❍ প্রশ্ন: কোমর ব্যথায় মালিশের কোনও ভূমিকা নেই?

☛ উত্তর: মাংসপেশিতে ব্যথা হলে হালকা মালিশে আরাম পাওয়া যায়। তবে এর বিশেষ পদ্ধতি আছে। এছাড়া ক্ষেত্র বিশেষে আলট্রাসনিক রে বা সর্টওয়েভ ডায়াথারি কয়েকটা সিটিং নিতে হয়।

❍ প্রশ্ন: ৪০ এর ওপর বয়সে তত এমনিতেই নানান ব্যথাবেদনা জাঁকিয়ে বসে। কখনও পিঠে, কখনও গােড়ালিতে কখনও বা হাতে। ব্যথার চোটে দৈনন্দিন কাজকর্ম বরবাদ।

☛ উত্তর: এই ধরনের ব্যথা এবং মানসিক অবস্থা সাধারণত সট টিস্যু রিউম্যাটিজমের জন্য হয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা, বিভিন্ন তাদের নাম। হয়তাে কখনও অজান্তে পিঠে হ্যাচকা টান লেগেছিল। তারপর আর তার কথা মনে নেই। হঠাৎ করে একদিন পিঠের কোনও একটা মাংসপেশিতে ব্যথা শুরু হল। এবং চলতে থাকল। এর নাম ফাইব্রোমায়ােসাইটিস। গােড়ালির নীচে ব্যথা। সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেলা যায় না মাটিতে। বেশি হাঁটলে ব্যথা বাড়ে। নাম প্ল্যান্টারফ্যাসাইটিস। গােড়ালির ওপর থেকে পায়ের পেছন দিকে ব্যথা। এক্ষেত্রেও সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেলতে লাগে। এবং বেশি হাঁটাচলা করলে ব্যথা বাড়ে। রেট্রোক্যালকেনিয়াল বারসাইটিস। কাঁধের কাছে হাত আটকে গেছে। বেশি নড়াচড়া করতে বা উপরে তুলতে ব্যথা ফ্রোজেন সােলডার। ফাইব্রোমায়ালজিযায় থাইয়ের কাছে, পিঠে, হাতের মাংসপেশিতে হঠাৎ করে ব্যথা হয়। টিপলে বা কাজ করতে গেলে লাগে। টেনিস এলবাে আগে বলা হত টেনিস খেলােয়াড়দের রােগ। এখন এতে আক্রান্ত হতে পারেন সবাই। বিশেষ করে মহিলারা। সব থেকে বড় অসুবিধে দেখা দেয় জামা কাপড় নিঙরাতে। এই সমস্ত ব্যাথা যন্ত্রণার একটা বিশেষত্ব আছে। মন যেন ব্যথার জায়গায় আটকে যায়। গাঢ় ঘুম হতে চায় না। চেহারায় মানসিক অশান্তির ছাপ ফুটে ওঠে।

❍ প্রশ্ন: হাইপােথাইরয়েডিজম হলেও তাে নাকি হাতে নানারকম ব্যথা হয়?

☛ উত্তর: হাইপােথাইরয়েডিজম থাকলে সব ধরনের ব্যথা বেদনার প্রকোপ বাড়ে। দু'ধরনের ব্যথার কথা বিশেষ করে বলছি। অনেক সময় দেখা যায় বুড়াে আঙুল নড়ানাে যাচ্ছে বা ব্যথা হচ্ছে। এর নাম ডি কুয়ার ভেনম ডিজিজ। কারপাল টানেল সিনড্রোমে কজির ভেতর দিকে টোকা দিলে সমস্ত হাত ঝিন ঝিন করে। এই ধরনের ব্যথা নিয়ে এলে আমরা থাইরয়েড টেস্ট করাই। এবং সেইমতাে ওষুধপত্র দিলে রােগী ঠিক হয়ে যায়।থাইরয়েডের অসুখ কমে গেলে অন্য ব্যথা বেদনার তীব্রতাও কিছু কমে।

❍ প্রশ্ন: আর হাত পা পিঠের অন্যান্য ব্যথাগুলির ক্ষেত্রে?

☛ উত্তর: প্রথম কথা ব্যথা হচ্ছে বলে একদম চুপচাপ বসে গেলে চলবে না। আবার ব্যথাকে অবজ্ঞা করে যা খুশি তাই করাও অনুচিত। কয়েকটি নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। এবং অন্যান্য চিকিৎসা চলবে। প্রথমে নিয়ম কানুনের কথা বলি। টেনিস এলবাের ক্ষেত্রে কনুই থেকে কবজির মাঝের অংশে টাইট ব্যান্ড পরে কাজকর্ম করতে বলা হয়। এতে কাজকর্ম সবই বজায় থাকে অথচ মাংসপেশিতে অনাবশ্যক টান পড়ে না। প্লান্টার ফ্যাসাইটিস দেখা দেওয়ামাত্র হিল তােলা জুতাে পরা বন্ধ করতে হবে। জুতাের গােড়ালি হবে স্পঞ্জ দিয়ে তৈরি। অথবা খুব নরম চপ্পল ব্যবহার করতে হবে। ফাইব্রোমায়ালজিয়াতে যেখানে ব্যথা সে জায়গাটাকে একটু বিশ্রাম দিতে হবে। যে ধরণের কাজ করলে ব্যথা বােধ হয়, সাময়িকভাবে সেই সমস্ত কাজ বাদ দিতে হবে। ফ্রোজেন সােলডারে বাথার ওষুধ খেয়ে বা যা করে হােক হাতের নাড়াচাড়া বজায় রাখা দরকার। বাকি চিকিৎসা তাে আছেই। চিকিৎসা বলতে নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম এবং সর্টওয়েভ ডায়াথার্মি বা আলট্রাসনিক থেরাপি। এতেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায়। কিছু ক্ষেত্রে ব্যথার জায়গায় স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দেওয়ার দরকার পড়ে।

❍ প্রশ্ন: গরম সেঁক বা মালিশে কোনও উপকার হয় না?

☛ উত্তর: সাধারণ গরম সেঁকের বেশির ভাগটা কাজ করে চামড়ার উপর। সেজন্য আরাম হলেও এ থেকে রােগের কোনও উপকার হয় না। মালিশের ক্ষেত্রেও ব্যপারটা অনেকটা তাই। চামড়ার উপরে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। আরাম লাগে কিন্তু স্থায়ী ফল কিছু হয় না।

❍ প্রশ্ন: সর্টওয়েভ ডায়াথামি বা আলট্রাসনিক থেরাপির ব্যাপারও তাে তাই।

☛ উত্তর: না, সর্টওয়েভ ডায়াথার্মির তাপ একটার পর একটা স্তর ভেদ করে একদম ব্যথার উৎসে পৌঁছে যায়। আলট্রাসনিক রে তেও শব্দতরঙ্গ ব্যথার জায়গায় পৌঁছে আশপাশের জট ছাড়িয়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। কাজেই দু'টি ক্ষেত্রেই দিনে ১০ মিনিট করে ১০-১২ টা সিটিংএ প্রচুর উপকার হয়।

❍ প্রশ্ন: সিটিং কি রােজ নেওয়া দরকার?

☛ উত্তর: প্রথম দিকে একটানা রােজ নিতে হবে। তবে পাকাপাকিভাবে ভাল থাকতে গেলে সন্ট টিস্য রিউম্যাটিজমে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা কিন্তু একান্ত জরুরি।

❍ প্রশ্ন: কী রকম?

☛ উত্তর:
(১) বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতাে হালকা কিছু ব্যায়াম করা। যেমন অ্যারােবিকস, হাল্কা ওজন নিয়ে বা মেশিনে কিছু ব্যায়াম, সাইক্লিং ইত্যাদি। তবে এমন ব্যায়াম করতে হবে যাতে ব্যথার জায়গায় অনাবশ্যক টান না পড়ে।
(২) ব্যথা চলাকালীন খুব হাল্কা খাবার দাবার খেতে হবে।
(৩) বিদেশে চালু হয়েছে রিক্রিয়েশন থেরাপি বা অপারেন্ট কণ্ডিশনিং থেরাপি বা সহজ কথায় দৈনন্দিন জীবনে ভাল থাকার চেষ্টা। দুটো ধাপে এটা করার চেষ্টা করি আমরা। প্রথম, ঠিকঠাক ঘুমােনাের ব্যবস্থা করা। দরকার হলে অ্যালজোলাম জাতীয় দুশ্চিন্তা কমানাের ওষুধ দিতে হতে পারে। দ্বিতীয়, মানসিক প্রফুল্লতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। কখনও সাইকলােজিকাল কাউন্সেলিং কখনও বা অবসাদ কমানাের ওষুধ ব্যবহার করতে হয়।

❍ প্রশ্ন: হাত পা ব্যথা থেকে অবসাদ?

☛ উত্তর: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থেকে প্রায়শই অবসাদের জন্ম হয়। আবার অবসাদ থেকেও যে ব্যথা হয় না তা নয়। আসলে এটা ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে। কেউ কেউ অনেক ব্যথা নিয়ে দিব্যি জীবন কাটিয়ে যান। কেউ অল্প ব্যথাতেই অবসাদে আক্রান্ত হন। অবসাদ থেকে আবার ব্যথা বাড়ে।

❍ প্রশ্ন: কিছু ব্যথা একবার শুরু হলে জীবনভর সারে না এমনও তাে হয়?

☛ উত্তর: বয়সের কারণে ক্ষয়ক্ষতি বা দুরারােগ্য কোনও রােগের কারণে ব্যথার ক্ষেত্রে অনেক সময় অপারেশন বা নার্ভ ব্লক করতে হয়। যেমন অস্টিও আর্থাইটিসের শেষ পর্যায়ে হাঁটু বা কোমরের এমন অবস্থা হয় যে তাদের আর বদলে না ফেলে উপায় থাকে। টোটাল হিপ বা টোটাল নি রিপ্লেসমেন্ট অপারেশন দরকার হতে পাবে। তবে এই অপারেশনের পর কিন্তু রােগী একদম সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। বিভিন্ন কারণে হাত, পা বা আঙুল যাদের কেটে ফেলতে হয়, যাকে অ্যামপুটেশন বলে, অনেক সময় কাটা অংশে মাঝে মধ্যেই ইলেকট্রিক শক লাগার মতাে ব্যথা হয়। এটা নার্ভের ব্যথা। এক্ষেত্রে কিছু ওষুধ ওই অংশে ইনজেকশন দিয়ে নার্ভ ব্লক করে দেওয়া হয়। এরকম ব্যথা অপারেশনের কাটা জায়গাতে হতে পারে। যে কোনও নার্ভের গতিপথে হতে পারে। শেষ পর্যায়ের ক্যান্সারের ব্যথাও সহ্যের অতীত হয় কখনও। অবস্থা বুঝে এ সমস্ত ক্ষেত্রে কখনও কিছু নার্ভ নষ্ট করা হয়, কোথাও অসার করা হয়।

❍ প্রশ্ন: এতে ক্ষতি হয় না?

☛ উত্তর: ব্যথা খুব অসহ্য না হলে নার্ভ ব্লক করা হয় না। অধিকাংশ সময় লাভের তুলনায় ক্ষতির পরিমাণ খুবই কম।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url