হৃদরোগের ঝুঁকি ও নানান সমস্যার উত্তর

হৃদরোগ একটি মারাত্মক রোগ। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত হৃদরোগের কারণে অনেক লোক মারা যাচ্ছে। এটি এমন একটি রোগ, যা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে আক্রান্ত ব্যক্তির যেকোনো সময় মৃত্যু হতে পারে। আসুন জেনে নিই হৃদরোগ সম্পর্কে বিস্তারিত। এখানে থাকছে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর। আশা করি, আপনাদের উপকারে আসবে। প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন:- ডাঃ কিশাের সিনহা 

❏ প্রশ্ন: বংশগত কারণে হৃদরােগ হতে পারে? 

☛ উত্তর: বাবা বা মা কারাের যদি হৃদরােগ থাকে এবং তাঁদের কেউ যদি এই রােগে ৫০-৫৫ বছরের আগে মারা যান। তবে তাঁদের ছেলেদের এই রােগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। 

❏ প্রশ্ন: কেন, মেয়েদের এ রােগ হয় না? 

☛ উত্তর: তবে মেয়েদের একটা সুবিধে আছে। মেনােপজের আগে পর্যন্ত ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাব থাকায় এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা খুবে কম থাকে। তবে দুইএর বেশি রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে মেয়েদেরও হতে পারে। 

❏ প্রশ্ন: রিস্ক ফ্যাক্টর বলতে? 

☛ উত্তর: মােট ১০ টি কারণ আছে যার মধ্যে ২ এর বেশি যদি কারাের মধ্যে দেখা যায় তাঁর ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এগুলিই রিস্ক ফ্যাক্টর। যেমন 
(১) বংশগত কারণ অর্থাৎ মা-বাবা বা রক্তের সম্পর্কযুক্ত আত্মীয়দের মধ্যে কারাের যদি এই রােগ থাকে 
(২) খুব বেশি ওজন 
(৩) ডায়াবেটিস 
(৪) উচ্চ রক্ত চাপ 
(৫) রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকা 
(৬) হাইপােথাইরয়েডিজম 
(৭) ধুমপান করা 
(৮) নড়ে চড়ে না বসার অভ্যেস 
(৯) বয়স এবং 
(১০) ছেলে হয়ে জন্মানো

❏ প্রশ্ন: দুইয়ের বেশি রিস্ক ফ্যাক্টর হৃদরােগের সম্ভাবনা তৈরি করে। কিন্তু জন্মগত কারণ, বয়স এবং ছেলে হয়ে জন্মানো— এই তিনটে তাে আর পরিবর্তন করা যাবে না।  সে ক্ষেত্রে হৃদরােগের সম্ভাবনা এড়াব কী ভাবে? 

☛ উত্তর: এই তিনটে কারাের মধ্যে থাকলেই তাঁর ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ হবে এমন কোনও কথা নেই। তবে তাঁর ক্ষেত্রে সাবধানতার মাত্রা বাড়বে। 

❏ প্রশ্ন: কী রকম? 

☛ উত্তর: ছােট থেকেই কিছু সুঅভ্যেস গড়ে তুলতে হবে। 
(১) নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন। যেমন, ভােরে ওঠা, দেরি করে না শােয়া। সপ্তাহের ছুটির দিন একটু মাটির কাছাকাছি কাটানাে, বাগান করা বা কাছেপিঠে কোথাও ঘুরে আসা অথবা পছন্দ সই কিছু করে সময় কাটানাে। 
(২) নিয়মিত ধ্যান এবং যােগাসন অভ্যেস করা। 
(৩) নিয়মিত খেলাধুলা করা। সম্ভব না হলে ব্যায়াম করা। নিদেন পক্ষে প্রচুর হাঁটাহাটি করা 
(৪) খাওয়া দাওয়ার নিয়ন্ত্রণ। এমনিতেই চর্বি জাতীয় খাবার, ভাজাভুজি এবং তেল মশলাদার খাবার না খাওয়া ভাল। যদি মােটা হওয়ার ধাত থাকে তাহলে মােটামুটি এগুলাে খাদ্যতালিকা থেকে বাদই দিতে হবে। 
(৫) বাড়িতে নিকটাত্মীয়দের কারোর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপােথাইরয়েডিজম বা হৃদরােগ থাকলে বছরে অন্তত একবার, বিশেষ করে বয়স যদি ৩০ এর ওপরে হয়। ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা দরকার। 
(৬) ধূমপানের অভ্যেস যাতে গড়ে না ওঠে সে দিকে নজর দেওয়া। 

❏ প্রশ্ন: হৃদরােগের সম্ভানা থাকলে ধ্যান করে কী হবে? 

☛ উত্তর: রােগ ঠেকিয়ে রাখতে গেলে শরীর এবং মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি, আগেকার দিনে ঋষিরা যে দিনের পর দিন না খেয়ে বা না ঘুমিয়ে কাটাতে পারলে তার মূলে ছিল এই ধ্যান এবং যােগাসন। ধ্যান এবং যােগাসনের সাহায্যে শরীর এবং মনকে এতখানি শান্ত করে তােলা যায় যে শারীরিক এবং মানসিক চাহিদা অনেক নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ডাক্তারি ভাষায় বেসাল মেটাবলিক রেট (বি এম আর) ব শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়ার হার অনেক কমে যায়। হার্টের কাজ পাম্প করে শরীরে রক্তের জোগান দেওয়া। বিপাকীয় প্রক্রিয়ার হার কমে গেলে শরীরে রক্তের চাহিদা কমে। হার্টের ওপর চাপ কমে। 

❏ প্রশ্ন: আবার নিয়মিত খেলাধুলা বা ব্যায়াম করার কথাও বললেন। এতে তাে হার্টের ওপর চাপ বাড়বে? 

☛ উত্তর: সব রকম পরিস্থিতির সঙ্গে যাতে শরীর মােকাবিলা করতে পারে সেই জন্য দুটোই করা উচিত। ব্যায়াম করলে শরীরে রক্তের চাহিদা বাড়বে। হার্টকে বেশি পাম্প করতে হবে। এবং হৃৎপিণ্ডের সব ছােট ছােট ধমনীগুলির মধ্যে দিয়ে দ্রুতবেগে রক্ত চলাচল করার ফলে চর্বি জুমে পথ বন্ধ করার প্রবণতা কমবে। অর্থাৎ নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতাও থাকবে হার্টের। 

❏ প্রশ্ন: চর্বি জমে হৃৎপিণ্ডের ধমনীর পথ বন্ধ হওয়া বলতে? 

☛ উত্তর: আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের খাদ্য হচ্ছে রক্তের মাধ্যমে এসে পৌছানো অক্সিজেন। হৃদপিণ্ডেরও তাই। সে নিজে পাম্প করে সমস্ত শরীরে রক্ত সরবরাহ করে। তাকে রক্ত সরবরাহ করার জন্য রয়েছে অসংখ্য ছােট ছােট ধমনী। করােনারি আর্টারি। এরা পুরাে হার্টের ওপরে জালের মতাে ছড়িয়ে আছে। এই ধমনীগুলির মধ্যে চর্বি জমলেই করােনারি আর্টারি ডিজিজ বা ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ হয়। কতখানি চর্বি জমল, কটার মধ্যে চর্বি জমল, রক্ত যেতে বাধা পাচ্ছে, না যেতেই পারছে না এসবের ওপর রােগের মাত্রা নির্ভর করে। 

❏ প্রশ্ন: শরীরে চর্বি জমার সঙ্গে কি হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে চর্বি জমার কোনও সম্পর্ক আছে? 

☛ উত্তর: হ্যা, সম্পর্ক আছে। সে জন্যই তাে আমরা ওজন কমানাে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানাের দিকে অত নজর দিই। 

❏ প্রশ্ন: হৃদরােগের প্রবণতা কমাতে চা কফি খেতে বারণ করা হয় কেন? 

☛ উত্তর: বারণ করা হয় না। কম খেতে বলা হয়, মূলত দুটি কারণে। প্রথমত যখন ক্যালরি কন্ট্রোলের কথা বলা হচ্ছে তখন সম্ভাব্য সব কারণগুলিই বাদ দিতে হবে। দিনে ১০—১৫ কাপ চা যাঁরা খান, দুধ চিনির মাধ্যমে প্রচুর ক্যালরি তাঁদের শরীরে ঢােকে। সেটা কাম্য নয়। দ্বিতীয় হল, শরীর মনের শান্ত অবস্থা আমরা চাই। চা কফি বেশি খেলে হার্ট রেট বাড়ে। ঘুম এবং খিধে কমে। কফি তাে খাওয়াই উচিত নয়। 

❏ প্রশ্ন: আর মানসিক চাপ? 

☛ উত্তর: মানসিক চাপ প্রত্যক্ষভাবে হৃৎপিণ্ডকে জখম করে না বটে তবে অনেক সময় প্রবল মানসিক চাপের মুখে হৃদরােগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। 

❏ প্রশ্ন: মানে? 

☛ উত্তর: মানে হৃদরােগ ভেতরে ছিল। কিন্তু তার লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। অশান্তি উদ্বেগের ফলে সেটা প্রকট হয়ে পড়ল। 

❏ প্রশ্ন: ডায়াবেটিস থাকলে হৃদরােগের লক্ষণ দেরিতে প্রকাশ পায়? 

☛ উত্তর: হ্যা, অনেক সময় এরকম দেখি আমরা।
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url