ওপেনহার্টের সার্জারির দু’সপ্তাহ পরে মর্নিংওয়াক শুরু করুন
প্রিয় পাঠক, এই পোস্টে আমরা অপেন হার্ট সার্জারির পর আপনার জীবনযাপন সম্পর্কে আলোচনা করতে যাচ্ছি। সহজ কথায় ওপেন হার্ট সার্জারির পর আপনি কিভাবে চলবেন বা আপনার দৈনন্দিন রুটিন কিভাবে তৈরি করবেন সেই প্রসঙ্গে কথা বলব। ওপেন হার্ট সার্জারি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ডাঃ সুধাংশু ভট্টাচার্য।
❍ প্রশ্ন: ওপেন হার্ট সার্জারির পর প্রচুর বাধা নিষেধ মেনে চলতে হবে?
☛ উত্তর: হ্যাঁ, প্রথম ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকবে। যেমন,
(১) বুকের ক্ষত পুরােপুরি স্বাভাবিক হতে সময় লাগে প্রায় ৬ সপ্তাহ। এই ৬ সপ্তাহ কোনও ভারী জিনিস তােলা যাবে না।
(২) আজকাল অপারেশনে বেশি রক্তপাত হয়না। শরীর নিজে থেকেই ৬ সপ্তাহের মধ্যে সেই ঘাটতি পূরণ করে নেয়। তবে প্রােটিন ঘাটতি সামলানাের জন্য ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ ভাল করে খাওয়া দাওয়া করা দরকার।
(৩) অপারেশনের সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে মর্নিংওয়াক চালু করতে হবে।
(৪) ধুমপান এবং যে কোনও তামাক জাতীয় নেশা পুরােপুরি বর্জন করতে হবে।
(৫) ডায়াবেটিস থাকলে সামলে চলতে হবে। চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের বিধি নিষেধের সঙ্গে দরকার হলে সাহায্য নিতে হবে ওষুধের।
(৬) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওধপত্র খেতে হতে পারে। নােন খাবারের ব্যাপারে সাবধান হওয়া দরকার। পাতে নুন খাওয়া একম বন্ধ।
(৭) বক্তের কোলেস্টরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা যথাস্থানে রাখতে চর্বি জাতীয় খাবারের ব্যাপারে সাবধান হতে হবে।
❍ প্রশ্ন: কত কিছু তাে খেতে বারণ করলেন। তবে খাবে কী সেটা বলুন।
☛ উত্তর: কী খাবে না তার ফর্দ এখনও শেষ হয়নি। সাধারণভাবে টাটকা ফল, সবজি এবং কম চর্বি যুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। কম খাবে সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় খাবার, চিনি, লবণ, অ্যালকোহল। রান্না এবং খাওয়ার নিয়ম কানুনে সামান্য পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন,
(১) ভাজাভুজি নয়, খেতে হবে বেক করা অথবা সেদ্ধ খাবার।
(২) বেশি তেলে রান্না নয়, সেদ্ধ করে পরে অল্প তেলে সাঁতলে নিতে হবে।
(৩) পাঁঠা, খাসির মাংস, ডিমের কুসুম, যে কোনও ধরনের বাদাম, নারকোল ইত্যাদি যথাসম্ভব কম খেতে হবে। সপ্তাহে এক দুবারের বেশি নয়।
(৪) দুধ খেতে চাইলে খেতে হবে স্কিমড মিল্ক।
(৫) মদ্যপান অত্যন্ত অল্পমাত্রায় করা যেতে পারে।
(৬) ক্যাফেইন অনেকের হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। তেমন হলে ক্যাফেইন-হীন চা, কোলা খেতে হয়।
❍ প্রশ্ন: এত হালকা খাবার খাওয়াই মুশকিল। খাওয়ার ইচ্ছে এবং খিদে দুইই তাে কমে যায় এসময়।
☛ উত্তর: অপারেশনের ঠিক পর পর খাওয়ার ইচ্ছে এবং খিদে দুইই খুব কমে যায় ঠিকই কিন্তু তা আবার ফিরে আসতে শুরু করে সুস্থতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। উল্টোদিকে, ঠিকমতাে খাওয়া দাওয়া করলেও দ্রুত ফিরে আসে সুস্থতা। রােগীর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে অনেক সময় বিশেষ কিছু পথ্যের নির্দেশ দেন ডাক্তারবাবু। অন্যথায় উপরের নিয়ম কানুন মেনে সুষম খাদ্য খেলেই চলবে। তবে খেতে হবে। না খেলে কিন্তু দুর্বলতা কমবে না।
❍ প্রশ্ন: শরীর মনে এ সময় যে ক্লান্তি দেখা দেয় তা কীভাবে দূর হবে?
☛ উত্তর: ওপেন হার্টের পর শরীর মনের এই ক্লান্তি খুব স্বাভাবিক। বেশ কিছুদিন কম পরিশ্রমের অভ্যেস, ভাল ঘুমের অভাব, ওষুধপত্র এবং অপারেশনের ধকল সব মিলিয়ে এরকম একটা পরিস্থিতি হয়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে খুব ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। বাড়ি ফিরে চলাফেরার অভ্যেসটাই ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। বাড়ির লােক অনেক সময় চলাফেরায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু হার্ট অপারেশন হয়েছে বলে একেবারে অকর্মণ্য হয়ে বসে থাকলে চলবেনা। সইয়ে সইয়ে হাঁটাচলার অভ্যেস বাড়াতে হবে। এবং দু'সপ্তাহের মধ্যে মর্নিংওয়াক চালু করে দিতে হবে। এর সাথে নিয়ম মাফিক পুষ্টিকর খাওয়া-দাওয়া এবং ঠিকঠাক ঘুম হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
❍ প্রশ্ন: অনেক সময় আবেগের অস্থিরতা দেখা দেয় এসময়?
☛ উত্তর: যে কোনও বড় অপারেশনের পর আবেগ নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিনের দুশ্চিন্তা, ভয় থেকেই এর উৎপত্তি। এর ফলে কারাের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। কেউ কান্নাকাটি শুরু করেন। দিনের পর দিন একই স্বপ্নের আনাগােনা চলতে পারে ঘুমের মধ্যে। মনঃসংযােগের অসুবিধে বা স্মৃতিভ্রংশতাও দেখা দিতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে সাধারণভাবে ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে এই অসুবিধে কেটে যায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং শারীরিক মানসিক ব্যস্তৃতা এই অবস্থা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। কয়েকটা জিনিস মেনে চলুন।
(১) শরীর যতখানি চায় ততখানি বিশ্রাম নিন।
(২) মর্নিংওয়াক একা না করে পছন্দসই কাউকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিন।
(৩) অবসর সময় বসে বসে রােগের কথা চিন্তা না করে গান শুনুন, বই পড়ুন কিংবা চোখ বন্ধ করে আপনার পছন্দসই কোনও বিষয়ের কথা ভাবতে চেষ্টা
(৪) ডায়েটিশিয়ান এবং আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে খাবারে একটু বৈচিত্র্যের ছোঁয়া আনার চেষ্টা করুন। খাবার যদি ওষুধের মতাে বিস্বাদ হয়ে পড়ে, একঘেয়েমি আসতে পারে। ৫) আপনার রাঁধুনিকে বলুন যে খাবারই দিক একটু সাজিয়ে গুছিয়ে দেন যেন। বা খাবার সাজানাের ব্যাপারে নিজেও হাত লাগাতে পারেন।
(৬) ওষুধ নিয়ম করে খান।
(৭) ছােটখাটো ঘরের কাজে সাহায্য করলে মন অন্যমনস্ক থাকবে। আপনার থাকার ঘরটা একটু অন্যভাবে সাজিয়ে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করুন।
(৮) সকাল সন্ধে ঘরে টাটকা সুগন্ধী ফুল রাখুন। এবং পছন্দের ধূপ জ্বালিয়ে দিন।
(৯) অহেতুক তর্ক-বিতর্কে একদম যাবেন না।
(১০) স্বাভাবিক বিবাহিত জীবন যাপন করার চেষ্টা করুন। ইত্যাদি। এরপরও যদি হতাশা বা অবসাদের হাত থেকে বেড়ােতে না পারেন, ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। অবস্থা বেশি জটিল হলে অনেক সময় সাইকোথেরাপিস্টের সাহায্যও দরকার হয়।