সিংহ লগ্নের ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়

যার সিংহ লগ্নে জন্ম, সেই ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়?
সিংহ লগ্ন

সিংহের জাতকের প্রকৃতি উচ্চ এবং মন উচ্চাভিলাসপূর্ণ হয়। তার ইচ্ছাশক্তি প্রবল ও দৃঢ় এবং হৃদয় উদার ও সাধুভাব-পূর্ণ হয়। অধ্যবসায় যুক্ত প্রতিজ্ঞা সিংহের জাতকের একটা প্রধান লক্ষণ। তার মন ন্যায়নিষ্ঠ, দৃঢ়তাসম্পন্ন, সহানুভূতিপূর্ণ, বিশ্বাসযুক্ত ও অসাধারণ শক্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে। বৃথাগর্ব বা নিজেকে জাহির করার দিকে তার একটা ঝোঁক থাকতে পারে এবং অহঙ্কার ও জাঁকজমক প্রিয়তা তার মধ্যে লক্ষিত হতে পারে; কিন্তু তা সত্ত্বেও, সে সম্বন্ধে অনাবশ্যক চপলতা বা লঘুতা প্রকাশ পায় না। তিনি সর্বদাই রাশভারি ও গম্ভীর থাকতে ভালবাসেন। তাঁর মধ্যে একটা সহজ আভিজাত্য আছে, যার জন্য যা-কিছু ক্ষুদ্র, যা-কিছু নীচ তার উপর তার একটা আন্তরিক ঘৃণা থাকা সম্ভব। খােলাখুলি ব্যবহার এবং যা-কিছু মহৎ, যা-কিছু প্রকাশ তাই তার প্রিয়। খোচা দিলে তিনি সহজেই রেগে ওঠেন, কিন্তু তার সে রাগ এবার তখুনি পড়ে যায়। সিংহের জাতক যদি প্রতিহিংসা নিয়ে থাকেন তাহলেও সে প্রতিশােধের মধ্যে কোন হীনতা থাকে না। প্রকাশেতে ও স্পষ্টভাবে তিনি প্রতিহিংসা নেন এবং অনেক সময় তা উদার বা মহৎ প্রতিশােধের (noble revenge) আকার ধারণ করে। কেউ যদি অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে তৎক্ষণাৎ ক্ষমা করতে তার আটকায় না। সিংহের জাতক ধৈর্যশীল; তিনি অটুট ধৈর্য্যের সঙ্গে নিজের কাজ করে যান এবং স্থির সহনশীলতার সাহায্যে উদ্দেশ্য সিদ্ধি করেন। 

সিংহ লগ্নের জাতকের প্রকৃতি বহুমুখীন; নানা বিষয়ে তার যােগ্যতা থাকা সম্ভব, কিন্তু প্রায়ই ললিত কলার দিকে তার একটু বেশী ঝোঁক থাকে। কবিত্ব জ্ঞান ও নাটকের দিকে আকর্ষণ প্রায়ই তার মধ্যে পরিস্ফুট হয়। তা ছাড়া, জাকজমক এবং আড়ম্বরপ্রিয়তা তার মধ্যে লক্ষিত হওয়া সম্ভব। তার মতামত খুব দৃঢ় ও স্থায়ী এবং তা ফাকা যুক্তিতর্কের দ্বারা সহজে বিচলিত হয় না। তার হৃদয়ও অত্যন্ত বেগবান, কিন্তু তিনি তাকে সংযত রাখতে জানেন। কোন কাজ আধাখ্যাচড়া রাখতে তিনি ভালবাসেন না এবং সব জিনিষের উচ্চ আদর্শের দিকে তার লক্ষ্য থাকে— ব্যক্তিগত সহস্র বিপদ উপেক্ষা করেও তিনি তার নির্দিষ্ট কার্য্য করে যান। সিংহ লগ্নের জাতক নিজের বুদ্ধিকৌশল ও গুণবায় প্রতিষ্ঠা ও সম্মান লাভ করেন। উচ্চবংশীয় এবং সম্রান্ত ব্যক্তিগণের সঙ্গে তাকে প্রায়ই মেলামেশা করতে হয়, বিশেষ করে আভিজাত্য-সম্পন্ন ও সন্ত্রান্ত-বংশীয় মহিলাগণের সঙ্গে তার যথেষ্ট হৃদ্যতা হওয়া সম্ভব। নিজের গুণপনা ও পরিশ্রমের দ্বারা তার অর্থোপার্জন হয়; উচ্চপদস্থ আত্মীয়স্বজন অথবা ধনী মুরুব্বীর সাহায্যেও তার অর্থাগম হওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্যহীনতা, পারিবারিক ঝাট এবং কর্মচারীর দোষে তার অর্থহানি অথবা অর্থাগমে বাধা হতে পারে। বন্ধুদের সাহায্যে অথবা নিত্যব্যবহার্য্য ব্যাদির ব্যবসায়েও তার অর্থাগম হওয়া বিচিত্র নয়। তাঁর পিতা তাঁর প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিশেষ অনুকুল হন না এবং পিতার প্রভাব জাতকের জীবনে সামান্যই লক্ষিত হয়। 

সিংহ লগ্ন জাতকের বাল্যাবস্থাতেই পিতার মৃত্যু হতে পারে অথবা পিতার জন্য জাতকের অবস্থাবিপর্যয় ঘটতে পারে; যদিই তা না-হয় তাহলে জাতকের পিতার দ্বারা বা পিতার জন্য উন্নতির পথে অনেক প্রতিবন্ধক উপস্থিত হয় অথবা সংসারিক চাপে/আর্থিক কারণে জাতক তরুণ বয়সে কাজে ব্যস্থ থাকে। পিতার জন্য বা পিতৃসংক্রান্ত কোন ব্যাপারে, পারিবারিক বিবাদ-বিসম্বাদ অথবা মামলা-মােকদ্দমার সম্ভাবনা আছে এবং পারিবারিক ব্যাপারের জন্য পিতার সঙ্গে বিচ্ছেদ হতে পারে— যদিও তাতে পিতার সঙ্গে গুরুতর কোন মনােমালিন্য হয় না এবং পিতার উপর ভক্তি সমানই থাকে। জাতকের উত্তরাধিকার নিয়ে অথবা বৈদেশিক কোন ব্যাপার, জলযাত্রা সংক্রান্ত কোন বিষয় নিয়ে মামলা-মােকদ্দমা হতে পারে। দেবােত্তর সম্পত্তি অথবা তীর্থযাত্রার ব্যাপারেও ঝাট অথবা বিবাদ বিসম্বাদ হওয়া অসম্ভব নয়। বিদেশ ভ্রমণের সময় কোন রকম দুর্ঘটনা বা উপঘাত হতে পারে; কিন্তু তা বিশেষ গুরুতর হবার সম্ভাবনা নেই। প্রচলিত ধর্ম সম্বন্ধে জাতকের মনে অবিশ্বাস থাকা সম্ভব এবং যদিও তার মনে ধর্ম্ম সম্বন্ধে উচ্চ আদর্শ থাকতে পারে তাহলেও, সে-আদর্শ প্রায়ই প্রচলিত ধর্মমতের বিরােধী হয়। গুরু পরম্পরাগত ধর্ম্ম বা ‘ কুলধর্ম ত্যাগ করে তিনি সমাজে নিন্দিত হতে পারেন; কিম্বা তার মধ্যে নাস্তিকতা বা সন্দেহবাদীর ভাব থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি সামাজিক ধর্মত্যাগ করেন না বটে, কিন্তু ধর্মের আধ্যাত্মিক তত্ব সম্বন্ধে উদাসীনই থেকে যান। সিংহের জাতকের সন্তানসংখ্যা প্রায়ই বেশী হয়, অনেক ক্ষেত্রে যমজ সন্তানও হয়ে থাকে (বিশেষতঃ স্ত্রীর যদি কুম্ভলগ্ন হয়) কিন্তু জ্যেষ্ঠ সন্তানের রিষ্টি বা ফাঁড়া থাকা সম্ভব, অনেক ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ সন্তান শৈশবেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়; যদিই বা সে দীর্ঘজীবী হয় তাহলে, তার কোন স্থায়ী বা দুরারােগ্য রােগ জন্মাতে পারে। সন্তানেরা বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তাদের মধ্যে প্রায়ই সদ্ভাব থাকে না। জাতকের দুই বিবাহ হতে পারে এবং দুই স্ত্রীরই সন্তান হওয়া সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী রুগ্না ও বৃদ্ধভাবাপন্ন হয়ে থাকেন অথবা স্ত্রীর কোন রকম অবৈকল্য থাকতে পারে। তাহলেও স্ত্রী পরিশ্রমশীলা ও গৃহকর্ম্মনিপুণা হওয়া সম্ভব। 

বিবাহিত জীবনে সিংহ লগ্নের জাতকের অনেক অশান্তি আসতে পারে; বিশেষত, স্ত্রীর রােগের জন্য অথবা জাতকের নিজের বৈষয়িক কর্মের জন্য কি জাতকের বন্ধুবান্ধবের জন্য, কি কর্মচারী ও ভৃত্যাদির জন্য জাতকের বিবাহিত জীবনে সুখের হানি হতে পারে। তা ছাড়া জাতকের স্ত্রী চিররুগ্ন হওয়ারই সম্ভাবনা আছে। অনেক সময় জাতকের নিজের স্বাস্থ্যহীনতা দাম্পত্য অশাস্তির কারণ হয়ে পড়ে। সিংহের জাতকের মধ্যে এই রােগগুলির প্রবণতা আছে— হৃদ্রোগ, মেরুদণ্ডের রােগ, রক্ত ও অস্থিসংক্রান্ত রােগ, দৃষ্টিশক্তির বৈকল্য, বাত প্রভৃতি। অপরিমিতাচার অথবা অতিরিক্ত ব্যসনাসক্তির জন্যও কোন রােগ হওয়া অসম্ভব নয় এবং গুহ্যদেশের কোন পীড়া ও হাতে কিম্বা পায়ে কোনরূপ আঘাত লাগারও সম্ভাবনা আছে। জীবনের একটা সময়ে জাতককে বিশেষ কষ্টভােগ করতে হয়। এমন কি হয়ত আহার, বিশ্রাম ও গৃহসুখের অভাবও অনুভব করতে হতে পারে। জাতক নিজে অথবা জাতকের সন্তানেরা অনেক সময় উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পত্তি পেয়ে থাকেন; কিন্তু সে সম্পত্তি পেয়ে কিছু বাধাবিঘ্ন অথবা বিলম্ব হওয়া খুব সম্ভব। জাতকের সমুদ্রযাত্রা, অথবা ধর্মের জন্য তীর্থযাত্রা, বড় বেশী হয় এবং হলেও তার ফল জাতকের পক্ষে ভাল হয় না। সমুদ্রযাত্রা, অথবা তীর্থযাত্রার জন্য, অথবা তা উপলক্ষ করে, কর্ম্মহানি অথবা অবনতির আশঙ্কা আছে। কিন্তু জাতকের স্থলপথে অনেক ভ্রমণ হতে পারে এবং তাতে করে তার আনন্দ এবং সম্পদ দুই-ই লাভ হবার সম্ভাবনা আছে। সময়ে সময়ে প্রমণ ব্যাপারে নিজের স্ত্রীর দ্বারা অথবা অন্য কোন স্ত্রীলােকের দ্বারা বাধা উৎপন্ন হতে পারে; কিন্তু তাতে বিশেষ ক্ষতি হয় না— আবার অনেক সময়, কর্মোপলক্ষে ভ্রমণে নিজের স্ত্রী অথবা অন্য কোন স্ত্রীলােককে সঙ্গে নিতে হয়। নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রমের দ্বারা জাতকের উন্নতি হয়; তাঁর কর্ম উচ্চশ্রেণীর ও সম্মানজনক হওয়া সম্ভব এবং কর্মোপলক্ষে রেলপথে বা স্থলপথে যথেষ্ট ভ্রমণের সম্ভাবনা আছে। উচ্চপদস্থ অথবা ধনশালী ব্যক্তির সাহায্যে জাতকের কর্ম্মবৃদ্ধিও হতে পারে; বিশেষত, সন্ত্রান্ত ও ধনশালী মহিলাদের দ্বারা জাতক যথেষ্ট উপকৃত হতে পারেন এবং তাদের সাহায্যের উপর নির্ভর করলে জাতককে কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে না। রূপদক্ষ, শিল্পী, কবি অথবা সাহিত্যিক, সম্প্রদায়ের মধ্যে তার অনেক বন্ধু থাকবে। বন্ধুদের সংস্রব কোন রকম বিবাদ-বিসম্বাদের কারণ হয়ে দাড়ানাে সম্ভব। পরিবারের মধ্যে, মাতৃস্থানীয় আত্মীয়দের রা, কোন রকম গুপ্তশত্রুতা হতে পারে, অথবা তারা জাতকের নামে মিথ্যা অধ্যাতি বা নিন্দা প্রচার করতে পারেন। কিন্তু তাতে আতকের বাস্তবিক বেশ কিছু ক্ষতি হয় না। 

সিংহ লগ্নের জাতকের শেষজীবন নির্জনে, অথবা তীর্থস্থানে, ধর্মালােচনায় অতিবাহিত হতে পারে। যে সকল খ্যাতনামা ব্যক্তির জন্মকালে সিংহের উদয় হয়েছিল তাদের কয়েক জনের নাম: শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গদেব, সম্রাট আকবর, স্বর্গীয় করিচা, গঙ্গাধর রায়, প্রেসিডেন্ট কুলিজ, স্বর্গীয় কৃষ্ণদাস পাল, স্বর্গীয় হরিনাথ দে, প্রসিদ্ধ নট শ্রীযুক্ত শিশিরকুমার ভাদুড়ী, স্বর্গীয় ব্যবহারাজীব ব্যোমকেশ চক্রবর্তী, স্বর্গীয় ডাক্তার সুরেশচন্দ্র সর্বাধিকারী, স্যার নৃপেন্দ্র নাথ সরকার। 

প্রিয় পাঠক, শব্দের বানানে ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এই বিষয় আরো পোস্ট পড়তে সূচিপত্র দেখুন। — গণক্কার।
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url