কন্যা লগ্নের ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়
ব্যবহারিক বুদ্ধি কন্যা লগ্নের জাতকের বিশেষত্ব। কাজকর্মে তিনি বেশ ধীরতার পরিচয় দিতে পারেন এবং তার মধ্যে ব্যবহারিক সাধুতা যথেষ্ট পরিমাণে আছে। তিনি ‘খারা’ প্রকৃতির লােক। দেনা যেমন কড়ায়-গণ্ডায় চুকিয়ে দেন, পাওনা তেমনি পাইটি পর্য্যন্ত আদায় করেন। তিনি প্রায়ই বুদ্ধিমান ও ইঙ্গিতজ্ঞ হন; কিন্তু তার মধ্যে গভীরতা কম। তিনি খুব হিসাবী ও সাবধানী লােক এবং খুটিনাটির দিকে তার নজর খুব বেশী। তার সামাজিক ব্যবহার অনিন্দনীয়; তিনি বেশ সদালাপী, বন্ধুদের কাছে তার ভাষা মােলায়েম এবং ভাব মধুর বলে মনে হতে পারে; কিন্তু যেখানে দেনাপাওনার ব্যাপার অথবা বৈষয়িক ব্যাপারে যােগ আছে, সেখানে তিনি নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন। তিনি যার প্রভু, তাকে যােল আনা কাজ করে মাইনে নিতে হবে। কোন বিষয় ফাঁকি তার কাছে চলবে না। কর্তব্যে অবহেলার মার্জনা তার কাছে নেই। তার ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় এবং অটলতার মতবাদ থেকে একচুল নড়াবার সাধ্য কারাে নেই। তিনি স্বভাবতঃ ঠাণ্ডা প্রকৃতির লােক, সহজে রাগেন না তেমনি আবার সহজে কাউকে ক্ষমাও করেন না। যে তার ক্ষতি করে, তার উপর বিরাগ সহজে মন থেকে যায় না, এবং বহুদিন ধরে প্রতিশােধের বাসনা তিনি মনে পুষে রাখেন। তাঁর মনের মধ্যে সামঞ্জস্যের একটা অভাব থাকা সম্ভব, যাতে করে তিনি ছােট ছােট ব্যাপারগুলিকে মস্ত বড় বলে মনে করে, সেই হিসেবে কাজ করেন। তিনি বিদ্বান হতে পারেন, অনেক বই পড়ে থাকতে পারেন, তার স্মৃতি জোরালাে এবং বুদ্ধি ধারালাে হতে পারে; কিন্তু জীবনের অন্তস্তলের ব্যাপারগুলি তাঁর অনুভুতির মধ্যে আসে না। জাতকের সাহিত্য, ইতিহাস প্রভৃতির দিকে ঝোঁক থাকা সম্ভব এবং নাটক, সঙ্গীত প্রভৃতির দিকেও তার অল্পবিস্তর টান থাকতে পারে; কিন্তু সে সকল বিষয়েও তার অনুভূতির গভীরতা বড় বেশী হয় না। জাতকের কথায় বেশ বাঁধুনি থাকে এবং বক্তৃতা, আবৃত্তি প্রভৃতিতে তার অশিক্ষিত-পটুত্ব প্রকাশ পেতে পারে।
ভূসম্পত্তির দিকে জাতকের ঝোঁক থাকা সম্ভব এবং চাষ-বাস, কি বাগবাগিচার কাজ, তাঁর প্রিয় হতে পারে। যে কোন বিশুদ্ধ বিজ্ঞান, কিম্বা ব্যবহারিক বিজ্ঞান, আয়ত্ব করবার ক্ষমতা তার মধ্যে থাকলেও, তিনি অনেক সময় ধর্মশাস্ত্র, প্রাচীন শাস্ত্র, আধুনিক ও প্রাচীন ইতিহাস প্রভৃতির দিকে বেশী ঝোকেন। ছেলেবেলায় তার শরীর বড় ভাল থাকে না; শৈশবে নানারকম অসুখ বিসুখ, উৎপাত-অভিঘাতের সম্ভাবনা থাকে। কন্যা লগ্নের জাতককে দস্তুরমত পরিশ্রম করতে হয়, অর্থোপার্জন সহজে হয় না এবং, কোষ্ঠীতে অসাধারণ ধনযােগ না থাকলে, তিনি কখনই বিশেষ ধনবান হতে পারেন না। তিনি প্রায়ই সঞ্চয়ী ও মিতব্যয়ী হয়ে থাকেন; কিন্তু সঞ্চিত অর্থ অনেক সময় আকস্মিক আপৎপাতে নষ্ট হয়ে যায়; বিশেষতঃ জীবনের প্রথম ভাগে ক্ষতির সম্ভাবনা খুব বেশী। কোষ্ঠীতে বৃহস্পতি যদি দুর্বল না হয়, তা হলে— জীবনের শেষভাগ বেশ স্বচ্ছল হয়ে পড়ে।
বিবাহ সুত্রে কিম্বা স্ত্রীর কাছে থেকে জাতকের কিছু প্রাপ্তি হতে পারে; অংশীর কাছ থেকেও কিছু পাওয়া অসম্ভব নয়। উত্তরাধিকার-সূত্র জাতকের কিছু লাভ হতে পারে। জাতকের বিদ্যা দ্বারাও অর্থ উপার্জিত হতে পারে— কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাপারে, অথবা শিক্ষকতা, অধ্যাপনা, গুরুগিরি প্রভৃতি কর্মে জাতক লাভবা হতে পারেন। জাতকের কর্মস্থানে অনেক পরিবর্তন হওয়া সম্ভব এবং অনেক সময় কর্মোপলক্ষে জাতককে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভ্রমণ, বা ঘােরাঘুরি, করতে হয়। সাহিত্য বা বিজ্ঞানের সংশ্রবে, অথবা যে কোন শিল্পের সংশ্রবে, তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা ও ক্ষমতার পরিচয় দিতে পারেন কিন্তু তবুও, একবার উন্নতি হয়ে, অবনতি হতে পারে— বিদেশে, অথবা বিদেশী ব্যক্তির সংশ্রবে, তার আর্থিক সাফল্য ও কৃতীত্বের খ্যাতি হওয়া সম্ভব। তার কর্মের সঙ্গে লেখক, সাহিত্য বা শিল্পের সংশ্রব থাকতে পারে কিন্তু যদিও, অনেক ক্ষেত্রে, জাতক, একসময়েই নানারকম কর্মে ব্যাপৃত হয়ে, কোনটাতেই বিশেষ সুবিধা করতে পারেন না, তাহলেও, নিজের সহজজ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার জোরে, শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠালাভ ও কৃতকার্যতা অর্জন করেন। ব্যবসায়ের দিকে গেলে কালগ্নের লােক প্রচলিত কারবার গুলিতে, অথবা মহাজনী কাজে, বেশ সফলতা লাভ করতে পারেন; কিন্তু ফাটকা, অথবা জুয়াখেলার দিকে ঝুঁকলে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। জাতকের পরিবারের মধ্যে কোন গুপ্তরহস্য থাকা সম্ভব। পিতার একাধিক বিবাহ হতে পারে, অথবা কোন স্মরণীয় গুপ্তপ্রেমের প্রভাব তার উপর থাকতে পারে। জাতকের আত্মীয়, জ্ঞাতি বা ভাই বােনের দ্বারা প্রতিষ্ঠার হানি ও আর্থিক ক্ষতি হওয়া মােটেই অসম্ভব নয়। বড় এক ভাই কি ভগ্নীর মৃত্যু হওয়া সম্ভব এবং ভাইবােনের সঙ্গে ভালরকম বনিবনাও কখনই হয় না। স্নেহ-প্রীতির ব্যাপারে তার অদৃষ্টে অনেক দুঃখ ও দুর্বিপাক উপস্থিত হয়।
স্ত্রীর সঙ্গে ভাল বনিবনাও না-হওয়া, দুই বিবাহ, বিবাহিতা স্ত্রী সত্বেও অন্য নারীর সঙ্গে প্রণয় প্রভৃতির যে কোন একটা হওয়া মােটেই অসম্ভব নয়। মােটর উপর, যৌন-প্রণয়ের ব্যাপারে হয় আশাভঙ্গ ও দুঃখ উপস্থিত হয় না-হয় জাতকের হৃদয় সে প্রণয়ে মােটেই সাড়া দেয় না। জাতকের প্রথম সন্তান প্রায়ই দীর্ঘজীবী হয় না— এবং অনেকক্ষেত্রে জাতকের পুত্র অপেক্ষা কন্যার সংখ্যা ঢের বেশী হয়। সন্তানদের বিবাহ নিয়েও জাতককে অনেক ঝঞ্চাট পােহাতে হয়— বিবাহে বহু বাধা-বিঘ্ন আসে এবং সহজে তাদের বিবাহ দেওয়া যায় না। পারিবারিক ব্যাপারে বা গৃহস্থালীর সংশ্রবেও জাতককে মধ্যে মধ্যে অশাস্তি ভােগ করতে হয় এবং তার জীবনে অনেকবার বাসপরিবর্তন ঘটে। শেষ বয়সে প্রায়ই জাতকের দুটি স্বতন্ত্র বাসগৃহ হয়; তার মধ্যে একটি স্বদেশে এবং একটি বিদেশে বা তীর্থস্থানে হওয়া সম্ভব। ভূসম্পত্তি বা পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে কোনরকম বিবাদ-বিসম্বাদের সৃষ্টি হতে পারে এবং সেজন্য তিনি অনেক সময় আইন-আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন; অথবা সেই সম্পর্কে তার বিরুদ্ধে মােকদ্দমা উপস্থিত হতে পারে।
কন্যা লগ্নের জাতকের পরিচিত ব্যক্তির সংখ্যা অনেক হয়; কিন্তু তার বন্ধু-পরিবর্তন হয়ে থাকে— একসময়ে যাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংশ্রব হয় আর-একসময়ে তাদের সঙ্গে কোন সম্বন্ধই থাকে না। কোন সম্রান্ত মহিলার দ্বারা জাতক যথেষ্ট উপকৃত হতে পারেন এবং জনসাধারণের নিকট জাতকের কিছু প্রতিষ্ঠা হওয়াও সম্ভব। বিদেশে জাতকের ভূসম্পত্তি হতে পারে এবং সম্পত্তির জন্য বা পারিবারিক কারণে বিদেশযাত্রা অসম্ভব নয়। শেষ বয়সে জাতক তীর্থস্থানে বাস করতে পারেন। গুরুজন কিম্বা গুরুতর সম্পর্কের জ্ঞাতিদের মধ্যে কেউ কেউ এবং কোন প্রতিষ্ঠাশালী ব্যক্তি জাতকের ঘােতর শক্ত হয়ে দাড়াতে পারেন এবং স্নেহ-প্রতির কোন ব্যাপারে জাতক একাধিক প্রবল শত্রু সৃষ্টি করতে পারেন। দেয় ও প্রাপ্য অর্থের জন্য তার আত্মীয়মহলে অনেক বিবাদ-বিসস্বাদ উপস্থিত হতে পারে এবং জাতকের প্রথম-সন্তানের যদি মৃত্যু না হয় তার সঙ্গে বিচ্ছেদ হতে পারে। কন্যার জাতকের অপঘাত মৃত্যুর আশঙ্কা আছে। চতুষ্পদ জন্তু অথবা কোনরকম অস্ত্রদ্বারা আঘাত সম্বন্ধে জাতকের বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত।
পিত্তজনিত রােগ অথবা শােকও জাতকের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তা ছাড়া অম্লশূল, উদরাময়, আমাশয়, দুর্বলতা-জনিত নানা রােগ, রক্তবিকৃতি প্রভৃতির প্রবণতা থাকাও সম্ভব। মাদকদ্রব্য সেবন জাতকের স্বাস্থ্যের একটা বড় অন্তরায়। তার স্বাস্থ্যোন্নতির প্রধান উপায় উন্মুক্ত স্থানে বাস, সাদাসিধে আহার এবং মুক্ত আকাশের তলে ব্যায়াম। মােট কথা প্রকৃতির সাহচর্য তার স্বাস্থ্যবৃদ্ধির অনুকুল।
যে সকল খ্যাতনামা ব্যক্তির জন্মসময়ে কন্যার উদয় হয়েছিল তাদের কয়েকজনের নাম মহামহােপাধ্যায় শশধর তর্কচূড়ামণি, বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা নরমা শীয়ারা, চার্লস ফ্যারেল, রেজিন্যান্ড ডেনী, ম্যারিলীন মীলার, জোয়েল ম্যাকরে, ওয়ার্ণায় বাক্সটার প্রভৃতি।
প্রিয় পাঠক, শব্দের বানানে ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এই বিষয় আরো পোস্ট পড়তে সূচিপত্র দেখুন।— গণক্কার।
Ratno ki amar