তুলা লগ্নের ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়

যার তুলা লগ্নে জন্ম, সেই ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়?
তুলা লগ্নের বৈশিষ্ট্য

তুলা লগ্নের জাতক ইঙ্গিতজ্ঞ ও বুদ্ধিমান। যে কোন বিষয় চট্ করে বােঝবার ও শেখবার ক্ষমতা তার মধ্যে আছে। সাহিত্য ও শিল্পের দিকে তার একটা সহজ আকর্ষণ দেখা যায় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকেও তার কিছু ঝোঁক থাকা সম্ভব। জাতক ভােগী প্রকৃতির লােক; তাঁর মধ্যে ভােগের বাসনা যেমন প্রবল তেমনি তীব্র; কিন্তু তার বাসনার মধ্যে আন্তরিকতা আছে। তিনি সাধারণতঃ শান্তিপ্রিয় এবং আনন্দ প্রিয় হলেও, যে ব্যাপারে তার ঝোক চাপে তার চরম করে ছাড়েন। কাজের ব্যাপারে তার মধ্যে যেমন আন্তরিকতা ও একাগ্রতা দেখা যায়—তেমনি কৌশল, কার্য-কুশলতা ও ডিপ্লোমেসিরও পরিচয় পাওয়া যায়। তার মধ্যে প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের অসাধারণ স্মৃতি লক্ষিত হয় এবং অন্য লােকে হয়ত যে-সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় মুহমান হয়ে শুয়ে পড়ে, তিনি তার উপস্থিত বুদ্ধির জোরে তা অবহেলায় পার হয়ে যেতে পারেন। তাঁর মধ্যে যেমন আন্তরিকতা ও একাগ্রতা আছে তেমনি চঞ্চলতাও আছে; যতক্ষণ যে খেয়াল তার মনকে অধিকার করে ততক্ষণ তিনি একান্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তাতে লেগে থাকেন; কিন্তু টপ করে মত পরিবর্তন করা এবং এক খেয়াল ছেড়ে আর এক খেয়ালের পিছনে ছােটা তার পক্ষে মােটেই অসম্ভব ব্যাপার নয়।

তুলা লগ্নের ব্যক্তির সামাজিক ব্যবহার বেশ শান্ত ও মধুর এবং তার মধ্যে সহানুভূতি প্রবল। যে কোন অবস্থার সঙ্গে নিজেকে তিনি খাপ খাইয়ে নিতে পারেন বটে; কিন্তু তিনি নিজের ব্যক্তিত্ব একেবারে বিসর্জন দেন না। অন্য লােকের সাহচর্যে তিনি কাজ করতে ভালবাসেন; কিন্তু সে-ক্ষেত্রেও তিনি বড় একটা অনুগামী হন না; অধিকাংশ স্থলে নিজেই নেতৃত্ব গ্রহণ করে থাকেন। তার সমস্ত কাজ-কর্মের মধ্যে একটা সহানুভূতির ধারা দেখা যায় এবং অন্যের প্রতি তার ব্যবহার প্রায়ই শিষ্টতা, দয়া ও স্নেহের সঙ্গে জড়িত হয়ে থাকে। অবশ্য, মধ্যে মধ্যে তার ভিতর বিরক্তি ও ক্রোধ প্রকাশ পায় এবং এক-এক সময় তিনি অতি সামান্য কারণেই চট্ করে রেগে উঠতে পারেন; কিন্তু তাকে শান্ত করতে বেশী কাঠ খড় পােড়াবার দরকার হয় না— বেশীর ভাগ জায়গায় তাঁর রাগ আপনা হতেই পড়ে যায়। তাঁর প্রকৃতির মধ্যে একটা খােলাখুলি ভাব আছে। এবং যদিও এক-এক সময় তিনি ব্যবসাদারী চাল চেলে থাকেন, তাহলেও পরক্ষণে তা স্বীকার করতে তার বাধে না। তার নিজের জীবন অনেকটা ভাগ্যের দ্বারা পরিচালিত। যদিও তার জীবনে কর্ম্ম করবার ইচ্ছা, শক্তি ও সুযােগ সবই উপস্থিত হয় এবং যদিও তার জীবন প্রায়ই কর্মবহুল হয় ও নিজের যথেষ্ট গুণপণা ও কৃতিত্ব থাকতে পারে, তাহলেও, তার জীবনের সমস্ত ঘটনা ঘটে যেন একটা অদৃশ্য হন্তের অঙ্গুলি-সঙ্কেতে। জীবনের অনেক বড় বড় ঘটনার উপর তার নিজের কোন হাত থাকে না। তার মধ্যে উদ্ভাবনীশক্তি আছে এবং যে কোন বিভাগে থােক তাঁর মৌলিকতার কিছু না-কিছু পরিচয় পাওয়া যাবেই। জাতকের কর্মের সঙ্গে প্রায়ই জনসাধারণের কোন রকম সংশ্রব থাকে। 

কৃষি অথবা জায়গা-জমি সংক্রান্ত কাজ, জলপথ অথবা জলীয় পদার্থ সংশ্লিষ্ট কোন কাজে জাতকের জীবিকানির্বাহ হতে পারে। চিকিৎসা বিশেষ করে অস্ত্র-চিকিৎসা, রসায়নবিদ, স্মৃতিবিদ অথবা আইনজ্ঞের কাজও জাতকের উপযােগী; কিন্তু কতেক উন্নতি অনেক সময় স্থায়ী হয় না— বিবাদ-বিসম্বাদ প্রভৃতি কারণে, শত্রুর দ্বারা এবং নিজের বুদ্ধির দোষে জাতকের অনেক সময় অবনতি ও আর্থিক ক্ষতি হয়ে থাকে। পরিবারস্থ ব্যক্তিবর্গের দ্বারা তার কর্ম সম্বন্ধে অনেক সাহায্য হয় এবং অবনতি হলেও অনেক সময় জনসাধারণ ও অনুচরদের কাছে তার সম্মান অটুট থাকে। পরিপূর্ণ কর্মজীবনের মাঝখানে সহসা তার অবনতি ও কর্ম্মহানি ঘটতে পারে— অন্যের কাছে তা একটা অপ্রত্যাশিত ব্যাপার বলে প্রতীয়মান হওয়া সম্ভব। 

তুলা লগ্নের জাতক স্বদেশে এমন কি নিজের জন্মস্থানেই সাফল্য ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং প্রায়ই পরিবার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলে গণ্য হন। উচ্চ ও সম্ভ্রান্ত-বংশীয় বহু ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় ও বন্ধুত্ব থাকে এবং সাহিত্যিক, শিল্পী বা বিদ্যাজীবী সম্প্রদায়ের মধ্যেও কারাে কারাে সঙ্গে পরিচয় অকস্মাৎ ঘনিষ্ট বন্ধুত্বে পরিণত হতে পারে; কিন্তু তিনি নিজে অনিচ্ছাসত্বেও কোন কোন বন্ধুর ক্ষতি বা অবনতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারেন। তার ভাই-ভগ্নীর সংখ্যা প্রায়ই বেশী হয়। সহােদর-সহােদরা যদিই বেশী না-হয়, তাহলে খুড়তুতাে-জাঠতুতো ভাই-বােন অনেক হয়ে থাকে। প্রথম বয়সে তিনি প্রায়ই এক বৃহৎ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত থাকেন; কিন্তু আত্মীয়বর্গের জন্য তাকে অনেক ঝঞ্চাট পােহাতে হয় অনেক সময় আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। পিতার পক্ষ থেকেও জাতকের অনেক অশান্তি আসে। হয়তো বাল্যে পিতার মৃত্যু হয়, না-হয় পিতার জন্য বিবাদ-বিসম্বাদ, ঝঞ্জাট এবং নিজের উন্নতির নানা অন্তরায় উপস্থিত হয়। পিতা প্রায়ই পদস্থ ব্যক্তি হন; কিন্তু তার নানারকম অশান্তির কারণ থাকতে পারে। পারিবারিক ব্যাপারে তার অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রু দাড়ায় এবং জ্ঞাতিবর্গ ও নিজের কর্মচারীর মধ্যে অনেকে তার গুপ্তশত্রু হয়ে দাড়ানাে মােটেই অসম্ভব নয়। জ্ঞাতি ও কর্মচারীর দ্বারা ক্ষতি এবং তাদের জন্য অনর্থক ব্যয়েরও আশঙ্কা আছে। জাতকের পিতার অথবা শ্বশুরের দুই বিবাহ হতে পারে। জাতকের বিবাহিত জীবন খুব সুখের হয় না। স্ত্রীর সহিত ভাল বনিবনাও না-হতে পারে। স্ত্রীর মৃত্যু হওয়াও অসম্ভব নয়; বিবাহে বিলম্বের সন্তাবনা আছে কিম্বা জাতক ঝোঁকের মাথায় টন্ করে বিবাহ করে বসতে পারেন। যার জন্য শেষে তাকে অনুতাপ করতে হয়। 

তুলা লগ্নের ব্যক্তির স্ত্রী প্রায়ই উচ্চ-বংশ-সস্তৃতা অথবা ধনশালী ব্যক্তির কন্যা হয়ে থাকেন। জাতককে অনেক ভ্রমণ করতে হয় এবং দূরদেশে, জলপথে ভ্রমণও অসম্ভব নয়। তার পুত্র-কন্যার সংখ্যা বেশী হয় না এবং পুত্রের জন্য কোন-না-কোন রকম অশান্তি উপস্থিত হয়। শেষ বয়সে পুত্রের জন্য বিশেষ চিন্তা উপস্থিত হয়; পুত্র প্রায়ই নিজের মনােমত হয় না অথবা পুত্রের সঙ্গে বিচ্ছেদ উপস্থিত হয়— পুত্রের মৃত্যুও হতে পারে। অনেক সময় আতক অপুত্রক হন ও দত্তক পুত্র গ্রহণ করেন; কিন্তু সেই পােষ্যপুত্র থেকেই অশান্তির উৎপত্তি হয়। শেষ বয়সে পুত্রের জন্য আশাভঙ্গ হওয়াও অসম্ভব নয়। জাতক বেশ লােকপ্রিয় হয়ে থাকেন। পারিবারিক কারণে এবং জনসাধারণকে তুষ্ট করবার জন্য জাতককে অনেক ত্যাগ স্বীকার ও অনেক দুঃখকষ্ট সহ্য করতে হয়। পারিবারিক ব্যাপার অথবা জন-প্রীতি তার অবনতি ও কর্ম্মহানির কারণ হতে পারে। জাতকের মধ্যে যকৃৎ, মূত্রগ্রন্থি ও স্নায়ুর দুর্বলতা থাকা সম্ভব। পায়ের পাতার কোনরকম অসুখ এবং ধমনীর কোন রকম বৈকল্য জন্মানােও অসম্ভব নয়। জাতক নিজেই নিজের মৃত্যুর কারণ হতে পারেন। জাতকের বিদেশ-ভ্রমণের সময় অথবা বন্ধনাবস্থায় মৃত্যু ও অসম্ভব নয়। জাতকের স্বাস্থ্যবৃদ্ধির জন্য পারিবারিক শাস্তি একান্ত প্রয়ােজন। জল ও জলীয় পদার্থ তার দৈহিক স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। সমুদ্রের উপকুলে বাস, নিয়মিত স্নান এবং আহায্যে তরল পদার্থের আধিক্য তার স্বাস্থ্যোন্নতির প্রধান সহায়। তাঁর অনেক ব্যাধি মাত্র জল-চিকিৎসা (Hydropathy) দ্বারাই আরােগ্য হতে পারে। 

যে সকল খ্যাতিমান স্ত্রী-পুরুষের জন্মকালে তুলালগ্নের উদয় হয়েছিল তাদের কয়েকজনের নাম: মহাত্মা গান্ধী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, নেপােলিয়ান, স্বর্গীয় মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, হায়দার আলী, স্বর্গীয় নবাব গনিমিয়া, স্বর্গীয় মহারাজা যতীন্দ্রমােহন ঠাকুর, কবি বায়রণ, দার্শনিক পণ্ডিত শ্রীযুক্ত হীরেন্দ্র নাথ দত্ত, স্বর্গীয় সারদাচরণ মিত্র, স্বর্গীয় ডব্লিউ সি ব্যানার্জি, প্রসিদ্ধ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্স, প্রসিদ্ধ উদ্ভাবক এডিসন, চলচ্চিত্র জগতের মার্লীন ডিট্রিক, ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কস (জুনিয়র), রির্কাডো কর্টেজ প্রভৃতি।

প্রিয় পাঠক, শব্দের বানানে ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এই বিষয় আরো পোস্ট পড়তে সূচিপত্র দেখুন।— গণক্কার।
Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url