মিথুন লগ্নের ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য কেমন হয়
মিথুনের জাতক শিষ্ট, দয়াপ্রবণ, নমনীয় অথচ ‘ খারা ’ প্রকৃতির লােক। সাধারণতঃ পরােপকারের দিকে ঝোক; কিন্তু অতি সামান্য কারণেই বিরক্ত হয়ে ওঠেন, যদিও তাকে ঠাণ্ডা করা বেশী শক্ত হয় না। এক এক সময় ভয়ানক খিটখিটে হয়ে পড়েন বা রেগে ওঠেন, খানিক পরেই আবার অনুতাপ করেন। মিথুনের জাতকের ধীশক্তি সাধারণত উৎকৃষ্ট শ্রেণীর হয়ে থাকে এবং শিল্প, কলা, সাহিত্য ও বিজ্ঞানের দিকে তার একটা স্বাভাবিক ঝোঁক থাকা সম্ভব। আইনের সকল ব্যাপারে তার বেশ বুদ্ধি খেলে এবং ব্যবসা বাণিজ্য বা বিষয়-কর্মের ব্যাপারগুলিও তিনি সহজেই বুঝতে পারেন। কাজেই, তার নানা-বিষয়ে অল্পবিস্তর জ্ঞান থাকা সম্ভব। তার মধ্যে উদ্ভাবনীশক্তি ও চিন্তায় মৌলিকতাও কতকটা দেখা যায়। উপযুক্ত পারিপার্শ্বিক পেলে, সাহিত্য, শিল্প বা বিজ্ঞানের অনুশীলন করে তিনি খ্যাতিলাভ করতে পারেন। নিজের কোন হৃদ্য বিষয় নিয়ে যখন কোন প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয় তখন তিনি বেশ বলতে কইতে মজবুত; নইলে, নিজের ভিতরেই গুটিয়ে থাকতে চান এবং হঠাৎ কিছু বলতে বা কোন কাজ করতে অনুরুদ্ধ হলে একটু থতমত খান।
মিথুন লগ্নের জাতক কর্তৃত্ব করতে ভালবাসেন; কিন্তু সে কর্তৃত্বের মধ্যে গর্ব বা যথেচ্ছাচারের লেশ থাকে না এবং যদিও তার মধ্যে দৃঢ়তা আছে তা এমন সমঞ্জস্য যে লােকে অনেক সময় তাকে দুর্বল কি অব্যবস্থিত-চিত্ত মনে করতে পারে। মিথুনের জাতকের ভাগ্য পরিবর্তনশীল। অনেক সময় স্ত্রীলােক অথবা পারিবারিক ব্যাপারের দ্বারা তার অর্থভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হয়— তা সে ভালর দিকেই হােক আর মন্দের দিকেই হােল্ক। তিনি জীবনে দারিদ্র্য এবং সচ্ছলতা দুইই ভােগ করে থাকেন। তার পরিবারের মধ্যে কোন ওরহস্য থাকতে পারে অথবা তার দুটি স্বতন্ত্র পারিবারিক বন্ধন থাকতে পারে। তার দুই মাতা হওয়া সম্ভব অর্থাৎ পিতার দুই বিবাহ হতে পারে কিম্বা অন্যের দ্বারা পালিত বা গৃহীত হয়ে তাকে মাতৃসম্বােধন করতে পারেন। তাঁর পালক অথবা পােষক-পিতা থাকাও অসম্ভব নয়। তার পরিবারের মধ্যে অনেক বিবাদ-বিসম্বাদের কারণ থাকতে পারে; পারিবারিক ব্যাপারের জন্য ও ভূসম্পত্তির জন্য তাকে আজীবন চিন্তা করতে হয়। এবং তার সঙ্গে তার পিতার বেশ সদ্ভাব ও সম্প্রীতি হওয়া সম্ভব; কিন্তু, তৎসত্ত্বেও দুজনের মতের মিল প্রায়ই হয় না। জাতকের আত্মীয়-স্বজনের অধিকাংশই প্রায় বেশ পদস্থ ও স্বচ্ছল অবস্থার লােক; এবং ভ্রাতাদের মধ্যে কেউ না-কেউ উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী হতে পারেন বা অন্য কোন রকম উচ্চপদ বা সম্মান পেতে পারেন। জাতক নিজেই অনেক সময় নিজের দুর্ভাগ্য বা অবনতি টেনে নিয়ে আসেন। সন্তানের জন্য কি দ্বারা, ফাটকার (speculation) কাজে, কোন স্ত্রীলােকের জন্য কি কোন প্রণয়-ব্যাপার নিয়ে, তার নানারকম ঝঞ্চাট, অপবাদ, ক্ষতি ও অর্থনাশ হতে পারে। মিথুনের জাতকের ভ্রাতাভগ্নীর সংখ্যা অথবা সন্তান সংখ্যা খুব বেশী হয় না।
মিথুন লগ্নের ব্যক্তির ভ্রাতা-ভগ্নী ও সন্তানদের মধ্যে প্রায় সকলেরই শিল্প বা কলাবিদ্যার দিকে কমবেশী কে থাকে। সন্তানের জন্য তাকে অনেক ঝাট পােহাতে হয়— সন্তানের দ্বারা প্রকাশ্য বিরুদ্ধাচরণও অসম্ভব নয়। মিথুনের জাতকের প্রায়ই দুই বিবাহ হয় অথবা একসঙ্গে দুটো প্রেমের ব্যাপার চলে, তার মধ্যে একটা প্রায়ই বিদেশে কি খুব দূরদেশে হয়ে থাকে। স্ত্রীলােকের দ্বারা বা স্ত্রীলােকের জন্য তার নানারকম বিপদ-আপদ, অশান্তি ও উদ্বেগ উপস্থিত হয়। তা ছাড়া, কোন গুপ্ত প্রেমের ব্যাপারে বা স্ত্রীলােকের বিশ্বাসঘাতকতার জন্যও অনেক কষ্ট ও অসুবিধা ভােগ করতে হয়। জাতকের স্বাস্থ্য খুব ভাল হয় না। অর্শ, ভগন্দর, মূত্রকৃচ্ছ, মূত্রাশয় ও জননেন্দ্রিয়ের রােগের প্রবণতা জাতকের মধ্যে আছে— তা ছাড়া শরীরে বিষ-প্রবেশ, স্নায়ুমণ্ডলীর পীড়া (Nervous ailments) এবং ফুসফুসের দুর্বলতা থাকাও সম্ভব। কোন রকম অস্ত্রাঘাত বা ঘােড়া থেকে অথবা কোন উচ্চস্থান থেকে পতনেরও আশঙ্কা আছে— চতুষ্পদ পশু হতে কোন রকম দুর্ঘটনাও অসম্ভব নয়। মিথুনের নানারকম দুর্ঘটনা হয় বটে; কিন্তু, প্রত্যেক বারেই যেন একটা অদৃশ্য দৈবশক্তি তাকে রক্ষা করে। মিথুন লগ্নের জাতকের দুর্ঘটনা দ্বারা কোনরূপ অঙ্গহানি হবার ভয় আছে অথবা জাতক হীনাঙ্গ বা অধিকাঙ্গ হয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারেন, অথবা জাতকের এমন কোন অযথা অবৃদ্ধি (superfluous growth) হ'তে পারে যা অস্ত্রোপচারের দ্বারা দূর করা দরকার। মিথুনের জাতকের মৃত্যু প্রায়ই বিদেশে হয়ে থাকে; কোন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি বা রাজা তার কারণ হতে পারেন। মৃত্যু যখন স্বাভাবিক হয় তখন তা কার্যোপলক্ষে ভ্রমণের সময় ঠাণ্ডা লেগে হতে পারে। পশু বা জলও তাঁর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
জাতকের যথেষ্ট প্রতিষ্ঠালাভ হওয়া উচিত— যদি না তিনি নিজের দোষে সমস্ত উন্নতির পথ রােধ করেন। জাতকের প্রায়ই একসঙ্গে দু’রকমের কাজ চলে। জাতকের ভূসম্পত্তি থেকে আয় হওয়া সম্ভব এবং প্রায়ই উত্তরাধিকার-সূত্রে কি উইলের দ্বারা ভূসম্পত্তি লাভ হয়। স্ত্রীর বা অংশীর দ্বারা অথবা স্ত্রীর সংশ্রবে, তার কর্মোন্নতি হওয়া সম্ভব। কিন্তু লিমিটেড কোম্পানী, ‘এসােসিয়েশন ইত্যাদিতে সংশ্লিষ্ট হলে, মামলা মােকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। পদলাতের পক্ষে এবং কর্মের পথে তাকে অনেক বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করতে হয় এবং অনেক সময় ধর্ম যাজক (আচার্য, গুরু, পুরােহিত ইত্যাদি শ্রেণীর লােক) , অথবা আইন ব্যবসায়ী (উকিল, ব্যারিষ্টার, এটর্ণী প্রভৃতি) দ্বারা প্রতিষ্ঠা ও পদবৃদ্ধির পক্ষে বাধা হয়। নিজে ইতস্তত করার জন্য অথবা গুপ্তশত্রুর দ্বারাও তার কম্মহানি হতে পারে। জাতকের বন্ধু বা পরিচিত ব্যক্তির সংখ্যা অনেক হয়; কিন্তু তারা প্রায়ই বিবাদ-বিসম্বাদ, উদ্বেগ ও ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায় এবং বন্ধুগণ প্রায়ই উগ্রভাবাপন্ন ও গর্বিত লােক হয়ে থাকে। মিথুন লগ্নের জাতকের গুপ্তশত্রুর সংখ্যা অনেক হয় এবং বিদেশে তার প্রকাশ্য শত্রুও দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু প্রকাশ্য শক্ত ও প্রতিযােগী দ্বারা অথবা শত্রুতা ও প্রতিযােগিতার ফলেই অনেক সময় তার ভাগ্যোন্নতি হয়ে থাকে। প্রোফেশন বা পেশাজীবি (উকিল, ব্যারিষ্টার, ডাক্তার, এটর্ণী, দালাল প্রভৃতি) মহলে তার বেশ খাতির থাকে যদিও, সময়ে সময়ে তাঁদের অন্য জাতককে উদ্বেগ ও অশান্তি ভােগ করতে হয়। জাতকের শক্র খুব সহজেই পরাভূত হয়।
যে সকল খ্যাতনামা ব্যক্তি মিথুন লগ্নে জন্মেছেন তাদের কয়েকজনের নাম:— হরনাথ ঠাকুর, শ্রীযুক্ত কেশােরাম পােন্দার, অমৃতলাল বসু, যােগেন্দ্র চন্দ্র বসু।
প্রিয় পাঠক, শব্দের বানানে ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এই বিষয় আরো পোস্ট পড়তে সূচিপত্র দেখুন। — গণক্কার।