কাশির আওয়াজ শুনেই রােগ বােঝা যায়

কাশির আওয়াজ শুনে রােগ বােঝা যায় 
ডাঃ পার্থসারথী ভট্টাচার্য। 

❏ প্রশ্ন: খুব কাশি হতে থাকলে কী করব? 

☛ উত্তর: গলা খুসখুস করে কাশি হতে থাকলে গরম নুন জল দিয়ে গার্গেল করুন বারবার। আদা, তুলসীপাতার রস মধু দিয়ে খেতে পারেন। 

❏ প্রশ্ন: আদা, গােলমরিচ, লবঙ্গ জলে ফুটিয়ে সেই জল খেলে শুনেছি কাশি ঠিক হয়ে যায়? 

☛ উত্তর: ঠিক হয়ে যায় কি না বলতে পারব না। তবে গরম জল এবং আদা আছে বলে খানিকটা আরাম পাবেন। 

❏ প্রশ্ন: আর কাফ সিরাপ? 

☛ উত্তর: যদি সেরকম না থাকে ধৈর্য ধরে নুন গরম জল বা বিটাডিন গার্গেল খুব কাজে আসে। আর কাফ সিরাপ যদি খেতেই হয় আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। 

❏ প্রশ্ন: একটা কাফ সিরাপ কিনতে আবার ডাক্ষারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে? 

☛ উত্তর: কাফ সিরাপ দু ' রকমের হয়। একটা কফ ওঠায়। একটা বসায়। আপনার হয়তাে কফ ওঠানাের সিরাপ দরকার। কিন্তু কিনে বসলেন কফ বসানাের সিরাপ বা উল্টোটা। অসুবিধে হতে পারে। সেজন্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। 

❏ প্রশ্ন: সাধারণ ঠাণ্ডা লেগে যেমন কাশি হতে পারে, আবার গুরুতর রােগেরও তাে কাশি হয়? 

☛ উত্তর: হ্যা, কাশি হয়েছে, প্রয়ােজনীয় সাবধানতা নেওয়ার পরও কাশি কমছে না, ডাক্তারের সঙ্গে যােগাযােগ করতে হবে। বিশেষ করে এইসব ক্ষেত্রে 
(১) রাত্রিবেলা বেশি কাশি হলে, 
(২) সন্ধের পর থেকে খুসখুস করে কাশি হলে, 
(৩) অনেক দিন ধরে একটানা চললে, 
(৪) কাশির চরিত্র বদলে গেলে অর্থাৎ দিনে বা রাতে যে সময় কাশি হচ্ছিল, সময়টা বদলে গেল বা কাশির আওয়াজ বদলে গেল অথবা একসঙ্গে দুটোই হল। 
(৫) কাশির সঙ্গে রক্ত বা পাকা কফ (যা আসলে কিন্তু পুঁজ) পরলে, 
(৬) প্রাথমিক চিকিৎসায় কাশি সারল না বা 
(৭) কাশির সঙ্গে ওজন ও খিধে কমছে। সঙ্গে ঘুসঘুসে জ্বর। 

❏ প্রশ্ন: কাশির আওয়াজ শুনে কি কিছু বােঝা যায়? 

☛ উত্তর: হ্যা, যেমন, খনখনে কাশির উৎপত্তি গলায়। শ্বাসনালির প্রথম অংশে কোনও সংক্রমণ হলে খনখনে কাশি হয়। শুকনাে কাশি সাধারণত সাইনােসাইটিস, শাসনালির সংক্রমণ এবং কিছু ফুসফুসের রােগে দেখা দেয়। একটানা ভিজে কাশির মূলে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, নিউমােনিয়া ইত্যাদি কোনও রােগ থাকতে পারে। গলার সংক্রমণে আরেক রকম ঘং ঘং শব্দের কাশি হতে পারে। 

❏ প্রশ্ন: কাশির সঙ্গে একবার রক্ত এলেই কি সেটা যক্ষ্মা? 

☛ উত্তর: কাশির সঙ্গে রক্ত এলেই যক্ষ্মা হয়েছে এটা খুব ভুল ধারণা। নানা কারণে বক্ত পড়তে পারে। তবে রক্ত পড়লে কিন্তু সাবধান হবেন। 

❏ প্রশ্ন: কীভাবে? 

☛ উত্তর: একে একে বলি। 
(১) উত্তেজিত হবেন না। 
(২) সােজা হয়ে শােবেন। 
(৩) স্বাভাবিক ঠাণ্ডা জল খান। 
(৪) ভিস বা স্ট্রেপসিল জাতীয় লজেন্স চুষতে থাকুন। 
(৫) একটু বেশি রক্ত পড়লে নিজে চলাফেরা না করে বাড়িতে ডাক্তার ডাকুন। 
(৬) কিছু ফুসফুসের অসুখে কাশির সঙ্গে রক্ত পড়ে। যদি বাঁ দিকের ফুসফুসে অসুখ থাকে, বাঁ দিক ফিরে শুয়ে থাকবেন। যতক্ষণ না ডাক্তার আসে। 
(৭) বেশি রক্ত পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার। 

❏ প্রশ্ন: রক্ত যদি এক আধবার পড়েই বন্ধ হয়ে যায়, আর কখনও না পড়ে, তাহলেও কি ডাক্তার দেখাতে হবে? 

☛ উত্তর: হ্যা দেখাতে হবে। 

❏ প্রশ্ন: কাশতে কাশতে গলা চিরে ও তাে অনেক সময় রক্ত পড়ে? 

☛ উত্তর: পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে রক্ত পড়াটা হয়ত গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু অত কাশি কেন হচ্ছে সেটা জানা জরুরি। অতএব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। 

❏ প্রশ্ন: কিছু বয়স্ক মানুষ আছেন যাঁদের শীত গ্রীষ্ম বারােমাস কাশি হয়, বিশেষ করে সকালে এবং রাত্রে। 

☛ উত্তর: বয়স্ক মানুষদের অল্প হাঁপের টান বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাত্রে ও সকালে কাশি হবে। শুয়ে থাকলে কাশি হয় অনেকের। নানা কারণে এরকম হতে পারে, বুকের মধ্যে এক ধরনের টিউমার থাকলে, অল্প স্বল্প হৃদরােগে, এমনকি রিফ্লাক্স ইসােফেজাইটিসেও। মাঝরাত্রে শুকনাে খুসখুসে কাশি চলতে থাকলে খোঁজ নিতে হবে তিনি রক্তচাপ কমানাের ওষুধ খান কিনা। এনালাপ্রিল জাতীয় ওষুধে কারাের কারাের কাশি হয়। সিগারেট এবং পরিবেশ দূষণ, ঝগড়া, অশান্তি, পরিশ্রম, মশা মারার ধূপ, রান্নার গ্যাস থেকেও কাশি হতে পারে। কোল্ড ড্রিঙ্কস বিশেষ করে হলুদ রংয়ের, কিছু ব্যথা কমার ওষুধ খেলে কারাের কারাের কাশি ও টান হয়। কাজেই লাগাতার কাশি দূর করতে চাইলে প্রথমে কারণ খুঁজে বার করা দরকার। এছাড়া, বয়স্ক মানুষকে সাধারণভাবেই কয়েকটি বিশেষ সাবধানতা মেনে চলতে হবে। যেমন 
(১) ঠাণ্ডার ধাত থাকলে শীতের শুরু থেকেই গলায় পাতলা কাপড় অথবা মাফলার জড়িয়ে রাখুন। পায়ে চটি। শীত বাড়লে মােজা। 
(২) ঠান্ডা জলে স্নান করবেন না। শীতকালে হাল্কা গরম, অন্যান্য সময় স্বাভাবিক ঠান্ডা জলে স্নান করুন। 
(৩) সিগারেট, বিড়ি, খৈনি, গুড়াকু, পান মশলা ইত্যাদি খাওয়া বন্ধ করুন। 
(৪) কোল্ড ড্রিঙ্কস, আইসক্রিম, ঠাণ্ডা দই, পুডিং ইত্যাদিও খাবেন না। 
(৫) অল্প কাশির সূত্রপাতেই, দিনে ৪-৫ বার গার্গেল করা শুরু করুন। বেনজোয়িন জাতীয় ওষুধ ফুটন্ত জলে ফেলে তার ভাপ নিন। 
(৬) পুরনাে রােগ যেমন, ফ্যারিনজাইটিস, সাইনােসাইটিস, ফুসফুসের কোনও অসুখ বা হাঁপানি ইত্যাদি থাকলে সামান্য কাশির সূত্রপাতেই সতর্ক হয়ে যান। 

❏ প্রশ্ন: হাঁপানির টান ওঠার আগে কি কাশি হয়? 

☛ উত্তর: অনেকের হয়। সেক্ষেত্রে কাশি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা ডেরিফাইলিন ট্যাবলেট খেয়ে বা কয়েকবার স্যালবুটামল ইনহেলার স্পেসার দিয়ে নিয়ে ডাক্তারকে খবর দিতে হবে। তাহলে আর বাড়াবাড়ি হবে না। 

❏ প্রশ্ন: ওষুধে এলার্জি থেকেও তাে শ্বাসকষ্ট হতে পারে? 

☛ উত্তর: হ্যা, এলার্জির ইতিহাস যদি জানা থাকে, খুব কাশি বা শ্বাসকষ্ট হতে দেখলে ডেরিফাইলিন ট্যাবলেট ও স্যালবুটামল ইনহেলাব দেওয়া যায়। 

❏ প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় হলে কী করতে হবে? 

☛ উত্তর: গর্ভাবস্থায় সাধারণত আমরা ওষুধ দিতে চাই না। গার্গেল করা, গলায় কাপড় জড়িয়ে রাখা, তুলসী পাতা, মধু, স্ট্রেপসিল, ভিকস্, আদা কুচি, গরম দুধ অথবা আদা গােলমরিচ ফোটানাে জল খাওয়া ইত্যাদি সব কিছু হার মানলে ওষুধ দিতে হয় কখনও। তবে এ নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই, বাচ্চা জন্মের পর কাশি নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। 

❏ প্রশ্ন: ছােট বাচ্চার কাশি হলে কী করতে হবে? ওদের দিয়ে তাে গার্গেল করানাে যাবে না। 

☛ উত্তর: অন্যান্য সাবধানতা মেনে চলবেন। বেশি ঠাণ্ডা জল খেতে দেবেন না। বারবার কাশি হলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। হঠাৎ করে প্রচণ্ড কাশি শুরু হলে দেখতে হবে বাচ্চার শ্বাসনালিতে কিছু ঢুকেছে কিনা।

Previous Next
No Comments
Add Comment
comment url